পিরিয়ডের সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তোমার জন্য উপযুক্ত স্যানিটারি প্যাড, যা এদিক-ওদিক কিংবা পাশ দিয়ে রক্তের বেরিয়ে যাওয়া বা লিকেজ (leakage) ছাড়াই পিরিয়ডের রক্ত ধরে রাখতে বা শোষণ (absorb) করে নিতে পারবে। এছাড়াও, নিশ্চিত করতে হবে প্যাডটা যেন আরামদায়ক হয় এবং যোনিতে চুলকানি বা জ্বালা সৃষ্টি করার মতো কোনো প্রকার সংক্রমণ (vaginal infection) না ঘটায়।
পিরিয়ড ঠিক কী?
পিরিয়ড হওয়ার বয়সে স্বাভাবিকভাবে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে কিছু পরিমাণে রক্ত বের হয়, যা খুবই সাধারণ একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। আর এই বিষয়টির নামই ‘পিরিয়ড’, যা আমাদের দেশে ‘রক্তস্রাব’ বা ‘মাসিক’ নামেও পরিচিত।
কেন এবং কীভাবে হয় এই পিরিয়ড?
গর্ভধারণের উপযোগী বয়সটাতে নারীর শরীর প্রতি মাসে গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত হয়। ডিম্বাশয় থেকে ‘ইস্ট্রোজেন’ (estrogen) আর ‘প্রোজেস্টেরন’ (progesterone) নামের দুই ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়ে থাকে। প্রায় এক মাস সময় নিয়ে এই হরমোনগুলো জরায়ুর ভিতরে একটি আস্তরণ তৈরি করে। এই আস্তরণ কয়েক স্তরে ভাগ হয়ে পুরো রক্তনালীর সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে। সন্তান ধারণের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে নিষিক্ত ডিমের সাথে সংযুক্ত হয়ে বিকাশ শুরু করতে তৈরি থাকে এই আস্তরণ। কিন্তু নিষিক্ত ডিম না থাকলে অর্থাৎ গর্ভাবস্থা না ঘটে থাকলে, সেই মাসে জরায়ু তার আস্তরণ ছিঁড়ে ফেলে। তাই সেখান থেকে কিছুটা রক্ত, কিছু টিস্যুর সাথে মিলে বেরিয়ে আসে যোনিপথ হয়ে।
রক্তপাতের পরিমাণ কেমন হওয়া স্বাভাবিক?
একবারের পিরিয়ডে রক্তপাতের পরিমাণ সাধারণত ৫ মিঃলিঃ থেকে ৮০ মিঃলিঃ পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৮০ মিঃলিঃ থেকে বেশি হলে তাকে ‘Heavy menstrual bleeding’ বলা হয়। সাধারণত পিরিয়ডের প্রথমদিন কিছুটা কম ফ্লো, দ্বিতীয় দিনে কিছুটা বেশি ফ্লো হয়ে থাকে। পিরিয়ড শেষ হওয়ার দিন এগিয়ে আসতে থাকলে ফ্লো-ও কমতে থাক। এটা পুরোপুরি স্বাভাবিক একটা ঘটনা। প্রত্যেক মেয়ের ক্ষেত্রেই এটা ভিন্ন হয়ে থাকে।
পিরিয়ড অস্বাভাবিক হওয়ার কারণ
সবার পিরিয়ডের অভিজ্ঞতা কি সব সময় একই রকম?
পিরিয়ডের সময় তোমার যা-কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যা যা সমস্যা অনুভব করো তুমি, সেগুলোর পিছনে একটা বড় ব্যাপার থাকে শরীরে নানান হরমোনের লেভেলের ওঠানামা। সবার হরমোনের লেভেল একই থাকে না, বাড়া-কমাটাও সবার মধ্যে একইভাবে হয় না। তাই সবার ব্যথার পরিমাণও এক হয় না। দেখবে তোমার হয়তো খুব ব্যথা হচ্ছে, আবার পরিবারের বা বন্ধুদের মধ্যেই অন্য কারো হয়তো তেমন বেশি ব্যথা হয় না। শারীরিক গড়ন, বয়স, ওজন, হরমোনের লেভেল, শরীরের সুস্থতা-অসুস্থতার অন্য নানান দিক, খাদ্যাভ্যাস-সহ জীবনাচরণের ভিন্নতা— এরকম অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে রক্তপাতের মাত্রা এবং ব্যথা-সহ পুরো অভিজ্ঞতার অন্যান্য দিক একেকজনের এবং একেক সময়ে একেক আলাদা রকমের হয়ে থাকে।
বেশি রক্তপাত কখন এবং কেন হতে পারে?
অনেক সময় হরমোন পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে পিরিয়ডের রক্তপ্রবাহের মাত্রা বদলাতে পারে।
তোমার যদি প্রতিদিন সাধারণ আকারের ১টা থেকে ৭টা পর্যন্ত প্যাড লাগে, তবে সেটা স্বাভাবিক বলা যায়। কিন্তু ২ ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে প্যাড পালটাতে হলে বুঝবে যে ব্লিডিংটা বেশ বেশি হচ্ছে।
আর, ৭ দিনের বেশি সময় ধরে পিরিয়ড হলে সেটাকে menorrhagia বলে। এবং এ-সময়ের মাঝে কখনো কখনো রক্তের প্রবাহও বেশ উঁচু মাত্রার হতে পারে। ব্লিডিং বেশি হলে স্বভাবতই কিছুটা অস্বস্তি লাগার পাশাপাশি শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। অনেক রক্ত যাওয়ার ফলে anemia বা রক্তস্বল্পতাও দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নাও, যদি—
১) প্রতি ঘণ্টায় বা দুই ঘণ্টার ব্যবধানে প্যাড বদলানো লাগে, বা
২) রক্ত ধরে রাখতে একটার বেশি প্যাড একসাথে পরতে হয়, বা
৩) ৭ দিনের বেশি সময় ধরে পিরিয়ড চলতে থাকে, বা
৪) পিরিয়ডের সময়েও অন্যবার স্বাভাবিকভাবে করতে পারা কাজগুলোও কোনোবার বেশি রক্তপাতের কারণে করতে সমস্যা অনুভব করো, বা
৫) শ্বাসকষ্ট হয়, বা
৬) বেশি দুর্বল লাগে।
একই আকারের প্যাড কি সবার জন্য প্রযোজ্য?
পিরিয়ড চলাকালে বের হওয়া রক্ত সামলানোর উপায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় আর কাজেও দেয় প্যাড এবং ট্যাম্পন। প্যাড কিংবা স্যানিটারি ন্যাপকিন বিভিন্ন ধরনের ও আকারের হয়ে থাকে। বয়স, যোনির আশপাশের অংশের আকার-আকৃতি এবং রক্তের প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে নিজের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন বেছে নিতে হবে। কিছু প্যাড একটু পাতলা এবং কিছু প্যাড একটু পুরু ও ভারী হয়ে থাকে। রক্ত বেশি গেলে ভারী প্যাড এবং কম গেলে পাতলা প্যাড ব্যবহার করার দরকার হয় খুব স্বাভাবিকভাবেই। আবার ব্যস্ত দিনে পরার জন্য এক রকমের প্যাড, আর রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর জন্য আরেক রকমের প্যাডও পাওয়া যায়।
হ্যাঁ, একই প্যাড তার মানে সবার জন্য আদর্শ হয় না। শুরুতেই একবারেই হয়তো তোমার সম্পূর্ণ উপযুক্ত প্যাডটি খুঁজে পাবে না, তবে বিভিন্ন আকার ও ধরনের প্যাড ব্যবহার করে করে কিছুদিনে নিজের জন্য আদর্শ স্যানিটারি ন্যাপকিনটি বুঝে নিতে হয়।
এমনকি, পিরিয়ডের কত নম্বর দিনে আছো, স্বাভাবিক ক্ষেত্রে সেটার ওপরও রক্তের প্রবাহের মাত্রা অনেকটাই নির্ভর করে। স্যানিটারি ন্যাপকিন তাই এর ওপর ভিত্তি করেও কিছু আলাদা মাপের ও প্রকারের হয়ে থাকে।
১. রেগুলার, ২. লার্জ, এবং ৩. এক্সট্রা লার্জ
প্রতিটি আকারের প্যাড রক্তপ্রবাহের মাত্রার সাথে মিল রেখে বানানো হয়ে থাকে। পিরিয়ডের শেষ দিনে রেগুলার সাইজের স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে পারো। অতিরিক্ত রক্তপাতের দিনগুলোতে এক্সট্রা লার্জ স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা উচিত। এই আকারের স্যানিটারি প্যাড রাতে ব্যবহারের জন্যও আদর্শ, যেহেতু রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ নড়াচড়ায় রক্তপ্রবাহ হঠাৎ বেশি হতে পারে। এছাড়া প্রায়ই পিরিয়ড চলাকালে অনেকেরই অনেকটা সময় ধরে ঘরের বাইরে কাটাতে হয়। তাই ঘনঘন প্যাড পালটানোর সুযোগ থাকে না। এমন পরিস্থিতির জন্যেও এধরনের হেভি-ফ্লো প্যাডগুলো ব্যবহার করা যায়। মান বজায় রেখে এবং একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে স্যানিটারি প্যাড আকারে যত বড় হয়, তার ব্লাড লিকেজ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আর সম্ভাবনাও সাধারণত তত বেশি হয়ে থাকে।
বেছে নাও তোমার জন্য সঠিক প্রডাক্ট
পিরিয়ড সামলাতে ‘মোনালিসা’ কীভাবে সাহায্য করে থাকে?
মোনালিসা স্যানিটারি ন্যাপকিন-এ শোষণক্ষমতা বৃদ্ধিকারী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে উন্নত মানের fluff pulp এবং এসএপি (super-absorbent polymer), যা কম সময়ে বেশি তরল শোষণ করতে পারে। এটি প্যাডের ভেতর থেকে রক্ত ভালোভাবে শোষণ করে সর্বোচ্চ শুষ্ক ঝরঝরে অনুভূতি এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে। এর সবচেয়ে উপরের লেয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেরা মানের পিপিএফ (perforated poly film), যা রক্তকে একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত করতে সহায়তা করে। ঘরে তৈরি ন্যাপকিনের বদলে এটি একটি স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী বৈজ্ঞানিক সমাধান, যা স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি তোমার স্বাস্থ্যেরও যত্ন নেয়। সব মেয়ের শরীরের গঠন, জীবনযাপন এবং পিরিয়ডে রক্তপ্রবাহের মাত্রা একই হয় না। তাই এই সব ভিন্নতার কথা বিবেচনা করে ‘মোনালিসা’ বাজারে এনেছে প্যাডের নানান অপশন। নিজের প্রয়োজন বুঝে এবং মানসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করলে পিরিয়ডের সময়টাকেও তুমি সামলাতে পারবে আরেকটু ভালোভাবে।