পিরিয়ড তোমার শরীরে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা প্রথমবার আসার সময় থেকে তুমি নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে, তাই পড়তে পারো কমবেশি মানসিক অস্থিরতার মধ্যেও। তবে পুরো বিষয়টা ঠিকভাবে বিস্তারিত- জানতে পারলে প্রায় প্রত্যেকটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
পিরিয়ডের চক্র বা সাইকেলটি কতদিনের হয়?
এক পিরিয়ডের শুরু থেকে আবার পরবর্তী পিরিয়ড শুরু হওয়ার মাঝে দিনের দূরত্ব থাকে সাধারণত ২২ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত। অর্থাৎ, পিরিয়ড ছাড়া মাঝের সময়টাও প্রত্যেকের জন্য একই দৈর্ঘ্যের হয় না। গড় হিসাব ধরলে বলা যায় মোটামুটি ২৮ দিন পরপর পিরিয়ড আসে।
তোমার বয়স যদি ১১ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে হয়, তাহলে তোমার এক পিরিয়ড অনেক সময়ই ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। পরে আরো বয়সের সাথে সাথে এই স্থায়িত্ব কমে স্বাভাবিকভাবে ৪ দিনের দিকে নেমে আসতে পারে।
মাসের কোন্ দিনে পিরিয়ড হবে, কীভাবে বুঝবে?
Period cycle বলতে বুঝানো হয় তোমার একবার পিরিয়ড শুরু হওয়ার দিন থেকে আবার পরবর্তী পিরিয়ড শুরুর আগের দিন পর্যন্ত সময়টি কত দিনের। তুমি খেয়াল রাখলে তোমার নিজের ক্ষেত্রে এই সাইকেলটি নিজেই বুঝে নিতে পারবে। একেকবার পিরিয়ড কতদিন স্থায়ী হচ্ছে, তার সাথে সাথে একবার পিরিয়ড আসার কতদিন পর আরেকবার আসছে সেটিও লক্ষ করো। শুরুর স্বাভাবিক দিনটি মনে রাখতে তুমি এই তারিখটি ক্যালেন্ডারে চিহ্নিত করে কিংবা নোটবুকে লিখে রাখতে পারো। মোবাইল ফোনে বেশকিছু app-এর মাধ্যমেও আজকাল পিরিয়ড শুরু হওয়ার সময় অনুসরণ বা track করা যায়।
এছাড়াও অনেক সময় দেখবে তোমার পিরিয়ড অনিয়মিত, কিংবা দেরিতে হচ্ছে।
কাদের এবং কেমন ক্ষেত্রে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে?
গর্ভাবস্থায় মেয়েদের পিরিয়ড বন্ধ থাকে। আর, তোমার ওজন হঠাৎ করে খুব বেড়ে বা কমে গেলে তার প্রভাব পিরিয়ড চক্রের উপরেও পড়তে পারে। আবার দীর্ঘদিন মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে, শারীরিক শ্রম বেশি হলে, বা ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন ভারসাম্যে না থাকলে তোমার পিরিয়ড নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশ দেরি করে আসতে পারে। এছাড়াও বেশি ক্যাফিন-যুক্ত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা অথবা অপরিচ্ছন্ন থাকার ফলেও পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি কোনো জটিল রোগ বা ইনফেকশনের ক্ষেত্রেও, যেমন জরায়ু টিউমারে আক্রান্ত হলেও, কয়েক মাস পর্যন্ত পিরিয়ড বন্ধ থাকতে পারে।
পিরিয়ড অস্বাভাবিক হওয়ার কারণ
পিরিয়ডে অনিয়মের কোন্ কারণগুলো আশঙ্কাজনক?
পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার কিছু কারণ অবশ্য তুলনামূলকভাবে জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন—
- থাইরয়েডের সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন আমাদের দেহের বিপাকে ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। থাইরয়েডে কোনো সমস্যা হলেও পিরিয়ড দেরিতে হতে পারে।
- ক্রনিক রোগ: ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ বলতে আমরা সাধারণত সে রোগগুলোকে বুঝি, যেগুলো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া-জনিত না বরং শরীরের নানান প্রক্রিয়ার কারণেই দীর্ঘদিনের জন্য বাসা বাঁধে। যেমন ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি। তোমার পিরিয়ড চক্রে এগুলোও প্রভাব ফেলতে পারে।
- টিউমার: পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হতে পারে জরায়ুতে টিউমার। এর জন্য তলপেটে ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত কিংবা পিরিয়ড কয়েক মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকার মতো লক্ষণ দেখা যায়।
তাই, পিরিয়ড সাইকেলে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা অনিয়মিত ভাব বুঝতে পারলে তোমার উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যাওয়া এবং তার পরামর্শে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। আর, পুষ্টিকর খাবার ও ব্যায়ামের অভ্যাসসহ স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণ সার্বিকভাবে তোমার শরীর ভালো রাখার পাশাপাশি হরমোন ইত্যাদির ভারসাম্য নিশ্চিত করে পিরিয়ড নিয়মিত রাখতেও অনেকটাই সাহায্য করবে।