মেয়ে, তুমি কি এখন বড় হচ্ছো ধীরে ধীরে? বড় হতে হতে জানা দরকার নিজের শরীর সম্পর্কে আরো কিছু। মেয়েরা অর্থাৎ নারীরা তো সন্তান গর্ভে ধারণ করতে এবং জন্ম দিতে পারে, যেটাকে প্রজনন বলে। একটা বয়সের পরে নারীর শরীর তাই সেই সন্তানধারণের জন্য তৈরি হয় ভিতরে ভিতরে। এইক্ষেত্রে শরীরের দু’টো খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম ‘যোনি’ আর ‘জরায়ু’। যোনি হচ্ছে নারীর প্রজননব্যবস্থার একেবারে বাইরের দিকের অংশটি, যাকে বড়রা বিভিন্ন সংস্কার কিংবা সংকোচের কারণে লজ্জাস্থান বা গোপন স্থানও বলে থাকেন। আর, জরায়ু হচ্ছে মধ্যের অংশ, যেটি গর্ভধারণের সময়ে গর্ভাশয় হিসেবেও কাজ করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম ‘ডিম্বাশয়’, প্রজননের জন্য যেখানে মানুষেরও ডিম সৃষ্টি হয় নিয়মিত। ডিম্বাশয়টি একটি সন্ধিবন্ধনী বা ligament-এর মাধ্যমে জরায়ুর সাথে যুক্ত থাকে। এই প্রতিটি প্রত্যঙ্গই গর্ভে সন্তান ধারণের কাজে অংশ নেয়। এই প্রস্তুতির জন্য শারীরিক কিছু পরিবর্তনের একটা বড় অংশ হিসেবেই এক সময়ে তোমার পিরিয়ডও শুরু হবে। কিন্তু পিরিয়ড কী, তুমি কি জানো? নিচে সেটাই জানাচ্ছি বিস্তারিত।
পিরিয়ড ঠিক কী?
পিরিয়ড হওয়ার বয়সে স্বাভাবিকভাবে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে কিছু পরিমাণে রক্ত বের হয়, যা খুবই সাধারণ একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। আর এই বিষয়টির নামই ‘পিরিয়ড’, যা আমাদের দেশে ‘রক্তস্রাব’ বা ‘মাসিক’ নামেও পরিচিত।
কেন এবং কীভাবে হয় এই পিরিয়ড?
গর্ভধারণের উপযোগী বয়সটাতে নারীর শরীর প্রতি মাসে গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত হয়। ডিম্বাশয় থেকে ‘ইস্ট্রোজেন’ (estrogen) আর ‘প্রোজেস্টেরন’ (progesterone) নামের দুই ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়ে থাকে। প্রায় এক মাস সময় নিয়ে এই হরমোনগুলো জরায়ুর ভিতরে একটি আস্তরণ তৈরি করে। এই আস্তরণ কয়েক স্তরে ভাগ হয়ে পুরো রক্তনালীর সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে। সন্তান ধারণের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে নিষিক্ত ডিমের সাথে সংযুক্ত হয়ে বিকাশ শুরু করতে তৈরি থাকে এই আস্তরণ। কিন্তু নিষিক্ত ডিম না থাকলে অর্থাৎ গর্ভাবস্থা না ঘটে থাকলে, সেই মাসে জরায়ু তার আস্তরণ ছিঁড়ে ফেলে। তাই সেখান থেকে কিছুটা রক্ত, কিছু টিস্যুর সাথে মিলে বেরিয়ে আসে যোনিপথ হয়ে।
কোন্ বয়সে পিরিয়ড শুরু হয়ে থাকে?
শারীরিক কিছু অবস্থার ওপর নির্ভর করে ১২ বছর বয়সের কিছু আগে কিংবা পরে প্রথম পিরিয়ড শুরু হয়৷ প্রথমদিকে হয়তো প্রতিমাসে নিয়মিত পিরিয়ড না-ও হতে পারে। তবে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে বেশিরভাগ মেয়ের ক্ষেত্রেই পিরিয়ড নিয়মিত হয়ে যেতে দেখা যায়।
প্রথম পিরিয়ডের সময় কেমন লাগতে পারে
পিরিয়ড শুরুর আগে কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে?
পিরিয়ড শুরুর আগের কিছুটা সময়ে তুমি নিজের মধ্যে এই ব্যাপারগুলো দেখতে পাবে:
— পেটে, পিঠে বা পায়ে ব্যথা
— পেট ফাঁপা অনুভব (পেট ভরা ভাব কিংবা ফুলে গেছে মনে হওয়া)
— স্তনে ব্যথা বা কালশিটে ভাব
— হঠাৎ ব্রণ ওঠা
— সহজেই আর ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন (ছোটখাটো বিষয়ে হঠাৎ করে রেগে যাওয়া কিংবা মন খারাপ লাগা)
— ক্লান্তির অনুভূতি
পিরিয়ডের সময়টাতে তোমার কেমন লাগতে পারে?
কিছু শারীরিক কিংবা মানসিক সমস্যা পিরিয়ডের পুরো সময় জুড়েই হতে পারে। যেমন: পেট ব্যথা, বমিভাব হওয়া, ক্লান্তি বোধ করা ইত্যাদি। কিন্তু কারো ক্ষেত্রে পিরিয়ডের ব্যথা এতটাই বেশি হয়, যে ওই দিনগুলোতে তারা স্কুল কিংবা অফিস কামাই দেয়। বেশি রক্তপাতের ফলেও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। তবে এই লক্ষণগুলোর যে-কোনোটিই অসহনীয় মাত্রায় হলে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়া ভালো হবে।
পিরিয়ডের সময়ে আরাম পাবে কীভাবে?
পিরিয়ড হলে মূল যেই বিষয়গুলো করা দরকার হয়, তার মধ্যে একটি হলো যোনি ঢেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড পরা, যেন রক্ত গায়ে বা পরনের কাপড়ে লেগে লেগে অস্বস্তি ও অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে। অনেকে কাপড় বা তুলা ব্যবহার করেন এবং অন্যদেরকেও করতে বলেন। কিন্তু বারবার একই কাপড় ব্যবহার করাটা তো অবশ্যই ক্ষতিকর, এমনিতেও কাপড় বা তুলা এইক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর সমাধানটি দেয় না।
এবার আসি অন্য যা যা সমস্যা বোধ করতে পারো সেই বিষয়ে। তলপেটে ব্যথা হলে hot water bag কিংবা গরম পানি বোতলে ভরে সেখানে ধরলে কমবেশি আরাম পাওয়া যায়। এছাড়াও, সহজ কিছু শরীরচর্চা বা যোগব্যায়াম করলে শরীর কিছুটা ভালো লাগতে পারে। এই সময়ে বেশি করে পানি, mineral বা খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ খাবার আর ফলমূল খাওয়া উচিত। টাইট কিংবা গরম কাপড় এড়িয়ে চলে এ-সময়ে নরম ও আরামদায়ক পোশাক পরলে চলাফেরা করাটা তোমার জন্য সহজ হবে। পাশাপাশি, একটা স্যানিটারি প্যাড অনেক লম্বা সময় পরে না থেকে একটু খেয়াল করে মাঝেমধ্যে বদলে নেওয়া দরকার।
মাসের কোন্ দিনে পিরিয়ড হবে, কীভাবে বুঝবে?
পিরিয়ডের চক্র বা সাইকেলটি ব্যক্তিভেদে কমবেশি ভিন্ন হয়, সাধারণভাবে এটি ২৬ থেকে ৩২ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। Period cycle বলতে বুঝানো হচ্ছে তোমার একবার পিরিয়ড শুরু হওয়ার দিন থেকে আবার পরবর্তী পিরিয়ড শুরুর আগের দিন পর্যন্ত সময়টি কত দিনের। তুমি খেয়াল রাখলে তোমার নিজের ক্ষেত্রে এই সাইকেলটি নিজেই বুঝে নিতে পারবে। একেকবার পিরিয়ড কতদিন স্থায়ী হচ্ছে, তার সাথে সাথে একবার পিরিয়ড আসার কতদিন পর আরেকবার আসছে সেটিও লক্ষ করো। শুরুর স্বাভাবিক দিনটি মনে রাখতে তুমি এই তারিখটি ক্যালেন্ডারে চিহ্নিত করে কিংবা নোটবুকে লিখে রাখতে পারো। মোবাইল ফোনে বেশকিছু app-এর মাধ্যমেও আজকাল পিরিয়ড শুরু হওয়ার সময় অনুসরণ বা track করা যায়।
সঠিক স্যানিটারি প্যাড বাছাই করবে কীভাবে?
পিরিয়ডের সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তোমার জন্য উপযুক্ত স্যানিটারি প্যাড, যা এদিক-ওদিক কিংবা পাশ দিয়ে রক্তের বেরিয়ে যাওয়া বা লিকেজ (leakage) ছাড়াই পিরিয়ডের রক্ত ধরে রাখতে বা শোষণ (absorb) করে নিতে পারবে। এছাড়াও, নিশ্চিত করতে হবে প্যাডটা যেন আরামদায়ক হয় এবং যোনিতে চুলকানি বা জ্বালা সৃষ্টি করার মতো কোনো প্রকার সংক্রমণ (vaginal infection) না ঘটায়।
স্যানিটারি প্যাড বাছাই করার সময় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা দরকার:
১. ভালো শোষণক্ষমতা
একটা ভালো স্যানিটারি প্যাড অল্প সময়ের মধ্যে ভালো পরিমাণে রক্ত শোষণ করতে পারে। শোষিত রক্ত যখন প্যাডের মধ্যের অংশেই আটকে দিতে পারে, তখন প্যাডে কোনোরকম চাপ পড়ার ঘটনায় (যেমন, বসার সময়) পাশ দিয়ে পিছনে ছড়িয়ে যাওয়ার (back flow) সম্ভাবনাও কমে। রক্ত ঠিকভাবে কেন্দ্রভাগে শোষিত হয়েছে কিনা, তা বুঝবার একটি উপায় হলো প্যাডের উপরের রক্তের রং খেয়াল করা। উজ্জ্বল বা তাজা রক্তের রং দেখলে বুঝতে হবে প্যাডটির শোষণক্ষমতা কম, যা back flow আটকাতে পারবে না। তাই, এর থেকে হতে পারে লিকেজ। কিন্তু রংটি যদি হালকা লাল বা আবছা লাল হয়, তাহলে এর অর্থ হলো রক্ত কার্যকরভাবে শোষিত হয়েছে।
২. প্যাডের দৈর্ঘ্য
পিরিয়ডের শুরুতে সাধারণত রক্তপাত বেশি হয়, তাই সেই রক্তকে দ্রুত ও কার্যকরভাবে শোষণ করতে পারে এমন একটি প্যাড বেছে নেওয়া দরকার হয়।
সময়ের হিসেবে রক্তের প্রবাহ অনুযায়ী স্যানিটারি প্যাডগুলোকে day এবং night ক্যাটেগোরিতে ভাগ করা হয়। ডে প্যাডগুলোর দৈর্ঘ্য ছোট (১৭০ মিঃমিঃ থেকে ২৫০ মিঃমিঃ পর্যন্ত) হয়ে থাকে এবং নাইট প্যাডগুলোর দৈর্ঘ্য হয় ৩৫০ মিঃমিঃ বা তার বেশি। মান ঠিক রেখে প্যাড যত লম্বা হয়, স্বাভাবিকভাবে তত বেশি রক্ত শোষণ করতে পারে। শুয়ে থাকার সময় পিছনের লিকেজ কার্যকরভাবে আটকানোর জন্য ভালো নাইট প্যাডে চওড়া hip guard থাকে।
৩. উপাদানগত আরাম
স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলা, cotton বা net জাতীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। প্রত্যেকের ত্বক আলাদা, তাই এভাবে নির্দিষ্ট উপকরণের সাথে আরামের মাত্রাও আলাদা। কারো হয়তো নরম তুলার প্যাড পছন্দ, আবার কারো নেটের top layer পছন্দ হতে পারে। কিন্তু উপাদানের ধরন বাতাস চলাচলকে প্রভাবিত করে।
যেই দিনগুলোতে রক্তপাত কম থাকে, তখন যোনিতে আর্দ্রতা বা ভেজা ভাবের মাত্রাও কম থাকে। কিন্তু উপাদান হিসেবে কোমল না হলে স্যানিটারি প্যাডের সাথে ত্বকের ক্রমাগত ঘষা লাগায় ত্বক লাল হয়ে যেতে দেখা যায়। একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো— পিরিয়ডের সময়ে যোনি ও আশপাশের অঞ্চলে (pubic area) ফুসকুড়ি বা rash হবেই। কিন্তু নরম ও আরামদায়ক স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে এই সমস্যাটি কমানো যেতে পারে।
বেছে নাও তোমার জন্য সঠিক প্রডাক্ট
পিরিয়ড সামলাতে ‘মোনালিসা’ কীভাবে সাহায্য করে থাকে?
মোনালিসা স্যানিটারি ন্যাপকিন-এ শোষণক্ষমতা বৃদ্ধিকারী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে উন্নত মানের fluff pulp এবং এসএপি (super-absorbent polymer), যা কম সময়ে বেশি তরল শোষণ করতে পারে। এটি প্যাডের ভেতর থেকে রক্ত ভালোভাবে শোষণ করে সর্বোচ্চ শুষ্ক ঝরঝরে অনুভূতি এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে। এর সবচেয়ে উপরের লেয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেরা মানের পিপিএফ (perforated poly film), যা রক্তকে একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত করতে সহায়তা করে। ঘরে তৈরি ন্যাপকিনের বদলে এটি একটি স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী বৈজ্ঞানিক সমাধান, যা স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি তোমার স্বাস্থ্যেরও যত্ন নেয়।