সবগুলো আর্টিকল দেখতে ক্লিক করো

পিরিয়ড শুরুর আগের এবং পরের বৃত্তান্ত

জুলাই 9, 2023

তুমি এমনিতে দারুণ হাসিখুশি হতে পারো, কিন্তু পিরিয়ড শুরুর আগে তোমার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসাটা অস্বাভাবিক না। তোমার মন খারাপ হতে পারে, তুমি ভয় পেতে পারো, মনের মধ্যে অস্বস্তি চলতে পারে, আবার তোমার মানসিক অবস্থা একদম অন্য সময়ের মতো থাকাটাও একেবারে অসম্ভব না।

মন-মেজাজের পরিবর্তনের বিষয়টার সাধারণ কারণ, শরীরে কিছু হরমোন লেভেলের ওঠানামা। পিরিয়ড এগিয়ে আসলে বেশিরভাগ মেয়ের মধ্যেই মানসিক ও শারীরিক মিলিয়ে যেই উপসর্গ বা লক্ষণগুলো দেখা যায়, সেগুলোকে premenstrual syndrome বা PMS বলা হয়। এগুলো কারও ক্ষেত্রে অতটা বেশি প্রভাবশালী না-ও হতে পারে, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে বা কখনও কখনও বেশ তীব্র আকারও ধারণ করতে পারে। সাধারণত প্রতি ৪ জনে ৩ জন মেয়ের মধ্যে লক্ষণীয় পিএমএস হয়ে থাকে।

পিএমএস-এর সম্ভাব্য তালিকাটা মোটামুটি দীর্ঘ। কিন্তু সবগুলো উপসর্গ তোমার যে হবেই, এমন কোনো কথা নেই।

১। মানসিক লক্ষণ:

  • টেনশন বা উদ্বেগ বেড়ে যাওয়া
  • অকারণেই মন খারাপ থাকা কিংবা কান্না পাওয়া
  • ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন, যেমন বিরক্তি বা রাগ
  • ঘন ঘন ক্ষুধার পরিবর্তন এবং খাওয়ার ইচ্ছা
  • ঘুমাতে সমস্যা হওয়া
  • মনোযোগ কমে যাওয়া

২। শারীরিক লক্ষণ:

  • জয়েন্ট বা পেশিতে ব্যথা
  • মাথাব্যথা
  • ক্লান্তি বোধ করা
  • স্তনে ব্যথা ও অস্বস্তি লাগা
  • হঠাৎ ব্রণ হওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া

পিরিয়ড নিয়ে যত ভুল ধারণা

PMS-এর আরো গুরুতর একটা পর্যায় হলো premenstrual dysphoric disorder (PMDD)। এতে মেজাজের পরিবর্তন বা বিষণ্নতা-অবসন্নতার মাত্রা বেশ বেশি হয়। PMS বা PMDD’র কারণে যদি তোমার কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয় কিংবা তোমার স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে বলে মনে হয়, তাহলে একজন ভালো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে নাও।

PMS হবার কারণ কী?

বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ বলে, হরমোনের সাইক্লিক পরিবর্তন-সহ মস্তিষ্কের রসায়নই প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোমের সম্ভাব্য কারণ। হরমোনের ওঠানামার সাথেই PMS-এর সূচনা ও মাত্রা  সম্পর্কিত। Menopause (নির্দিষ্ট বয়সের পরে পিরিয়ড পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া)-এর পর এবং গর্ভাবস্থায় সাধারণত এই লক্ষণগুলো থাকে না। মেজাজের দ্রুত ওঠানামা কিংবা ঘন ঘন পরিবর্তনের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে serotonin-এর পরিমাণ। অপর্যাপ্ত সেরোটোনিন পিরিয়ডের আগে বিষণ্ণতা, সেইসাথে ক্লান্তি এবং ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

পিএমএস এবং পিরিয়ডের সময় কীভাবে স্বস্তি পাবে?

  • যা যা করতে পারো—
  • হালকা শরীরচর্চা করলে তুমি শরীরে ও মনে অনেকটাই ঝরঝরে থাকবে।
  • একটি স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্যতালিকা অনুসরণ করতে পারো। দিনে ৩ বার করে পরিমাণে বেশি খাবার খাওয়ার চেয়ে, ঘন ঘন অল্প খাবার প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পরপর খাওয়া ভালো।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো উচিত, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা।
  • মাথা ভারী লাগলে যোগব্যায়াম থেকেও উপকার পেতে পারো।
  • যে যে খাবার খেতে পারো—
  • পানি: প্রচুর পানি পান করতে হবে।
  • ফল: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য তরমুজ ও শসা’র মতো মিনারেল-সমৃদ্ধ ফল খুবই ভালো। 
  • সবুজ শাকসবজি: পিরিয়ডের সময় শরীরে আয়রনের মাত্রা কমে যাওয়া সাধারণ ব্যাপার, বিশেষ করে তোমার রক্তের প্রবাহ যদি ভারী বা বেশি হয়। এর ফলে ক্লান্তি, শারীরিক ব্যথা এবং মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে। পালং শাকের মতো সবুজ শাকসবজি শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়ামও রয়েছে। এছাড়াও আদা, চিকেন, মাছ, হলুদ, ডার্ক চকলেট, বাদাম, দই, মসুর ডাল এবং বিচিযুক্ত শাকসবজি খেলে শরীর ভালো লাগবে।

পিরিয়ড চলাকালে যেহেতু পেলভিস-এ ব্যথা ও চাপের অনুভূতি, ভারী মাত্রার রক্তপাত, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া, পেট ফোলা ভাব, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো নানান সমস্যা দেখা দেয়; এগুলো এড়ানোর জন্য সতর্কতার অংশ হিসেবে প্রচুর পানি এবং তরল খাবার খাও। পিরিয়ডের সময় প্রায়ই বিভিন্ন জাঙ্ক ফুডের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যেতে দেখা যায়। বিশেষ করে আইসক্রিম, চকলেট, পিৎজা ও ফুচকা জাতীয় খাবার খাওয়ার ইচ্ছা বেশি হয়। খাবারগুলো খেতে মজার, সন্দেহ নেই। এবং খেলে হয়তো কিছুক্ষণ তোমার মন ভালো থাকবে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি ফল কিন্তু তেমন ভালো ন। পিরিয়ড চলাকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া সবচেয়ে ভালো এবং দরকারি। তাই, নিয়মিত সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, দুধ ও ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলো। এ-ধরনের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস একবার তৈরি হলে তা মন ভালো রাখতেও সাহায্য করে।

পিরিয়ডের সময় ব্যথা বেশি হলে আদা চা খেয়ে দেখতে পারো। অনেক ক্ষেত্রেই এটি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যথা কমিয়ে সুস্থ অনুভব করতে সাহায্য করে, তবে এটি সবার জন্য কার্যকর না-ও হতে পারে। আরেকটা জিনিস আছে, যেটা আমাদের সামনে থাকলেও মাঝে মাঝেই আমরা খেতে ভুলে যাই। কী সেটা? পানি! পিরিয়ডের সময় ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার সম্ভাবনা থাকে, তাই এ-সময়টায় বেশি করে পানি খাও।

  • যে যে কাজ না করলে ভালো—

কঠিন কোনো শারীরিক পরিশ্রম কিংবা ব্যায়াম পিরিয়ড চলার সময়টাতে না করাই ভালো। ভারী কিংবা কঠিন কোনো শারীরিক চর্চা করাটা এ-সময়ে যথেষ্ট কষ্টকর এবং বিপজ্জনক হতে পারে। পেলভিস-এ অতিরিক্ত চাপ পড়ায় এতে করে রক্তপাত অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে, তলপেট থেকে শুরু করে কোমরে ব্যথার পরিমাণও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাথা ঘোরা এবং অতিরিক্ত দুর্বলতাও দেখা দিতে পারে।

পিরিয়ডের সময়টায় নিজের যত্ন

পিরিয়ড শুরুর পরে কী চাই?

পিরিয়ড শুরু হওয়ার পরে কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকতে তোমার দরকার একটা ঠিকঠাক স্যানিটারি ন্যাপকিন।

পিরিয়ড চলতে থাকা সময়ে জামাকাপড়ে রক্তের দাগ লেগে যাওয়ার মতো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে অনেক মেয়েরই পড়তে হয় কম বা বেশি। ব্যাপারটা যতোই বিরক্তিকর হোক না কেন, এটা নিয়ন্ত্রণ করা কিন্তু যথেষ্ট কঠিন। সাধারণত, এই রক্তের দাগ পড়ে কিছু নির্দিষ্ট কারণে। যেমন, লিকেজ, প্যাডের শোষণ এবং ধারণক্ষমতা কম থাকা, অতিরিক্ত ভারী রক্তপ্রবাহ, ঘুমের মাঝে হঠাৎ পাশ বদল ইত্যাদি, যেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন।

কিন্তু পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহ চলাকালীন দিনগুলোতে ব্যবহার করার জন্য স্যানিটারি প্যাড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তোমার প্রথম এবং প্রধান গুরুত্ব দিতে হবে প্যাডের শোষণক্ষমতার ওপরে। উচ্চমাত্রার শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্যাড বাছাই করতে হবে। এরপর তোমাকে লক্ষ্য রাখতে হবে প্যাডটা আরামদায়ক কিনা তার ওপরে। সেক্ষেত্রে প্যাডের উপাদানগত মান যাচাই করে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে প্যাডের গুণগত মানের প্রতিও৷

পিরিয়ডের কত নম্বর দিনে আছো, স্বাভাবিক ক্ষেত্রে সেটার ওপরও রক্তের প্রবাহের মাত্রা অনেকটাই নির্ভর করে। স্যানিটারি ন্যাপকিন তাই এর ওপর ভিত্তি করেও কিছু আলাদা মাপের ও প্রকারের হয়ে থাকে।

১. রেগুলার, ২. লার্জ, এবং ৩. এক্সট্রা লার্জ

প্রতিটি আকারের প্যাড রক্তপ্রবাহের মাত্রার সাথে মিল রেখে বানানো হয়ে থাকে। পিরিয়ডের শেষ দিনে রেগুলার সাইজের স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে পারো। অতিরিক্ত রক্তপাতের দিনগুলোতে এক্সট্রা লার্জ স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা উচিত। এই আকারের স্যানিটারি প্যাড রাতে ব্যবহারের জন্যও আদর্শ, যেহেতু রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ নড়াচড়াতে রক্তপ্রবাহ হঠাৎ বেশি হতে পারে। মান বজায় রেখে এবং একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে স্যানিটারি প্যাড আকারে যত বড় হয়, তার ব্লাড লিকেজ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আর সম্ভাবনাও সাধারণত তত বেশি হয়ে থাকে।

পিরিয়ডে ভালো থাকতে পিরিয়ডকে জানতে হবে

মোনালিসা পিরিয়ড হ্যান্ডবুকের ফ্রি পিডিএফ ভার্শনে পাবে পিরিয়ড নিয়ে যাবতীয় তথ্য। জানবে পিরিয়ড কী, আর এই সময়টায় ভালো থাকতে কী কী করা দরকার হবে।

আমাদের ইনস্টাগ্রাম

ফলো করতে ক্লিক করো
আমাদের প্রডাক্টগুলো