হেভি ফ্লো’র দিনগুলোও কাটাও নিশ্চিন্তে
লেখক: monalisa
মেয়ে, তুমি কি এখন বড় হচ্ছো ধীরে ধীরে? বড় হতে হতে জানা দরকার নিজের শরীর সম্পর্কে আরো কিছু। মেয়েরা অর্থাৎ নারীরা তো সন্তান গর্ভে ধারণ করতে এবং জন্ম দিতে পারে, যেটাকে প্রজনন বলে। একটা বয়সের পরে নারীর শরীর তাই সেই সন্তানধারণের জন্য তৈরি হয় ভিতরে ভিতরে। এইক্ষেত্রে শরীরের দু’টো খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম ‘যোনি’ আর ‘জরায়ু’। যোনি হচ্ছে নারীর প্রজননব্যবস্থার একেবারে বাইরের দিকের অংশটি, যাকে বড়রা বিভিন্ন সংস্কার কিংবা সংকোচের কারণে লজ্জাস্থান বা গোপন স্থানও বলে থাকেন। আর, জরায়ু হচ্ছে মধ্যের অংশ, যেটি গর্ভধারণের সময়ে গর্ভাশয় হিসেবেও কাজ করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম ‘ডিম্বাশয়’, প্রজননের জন্য যেখানে মানুষেরও ডিম সৃষ্টি হয় নিয়মিত। ডিম্বাশয়টি একটি সন্ধিবন্ধনী বা ligament-এর মাধ্যমে জরায়ুর সাথে যুক্ত থাকে। এই প্রতিটি প্রত্যঙ্গই গর্ভে সন্তান ধারণের কাজে অংশ নেয়। এই প্রস্তুতির জন্য শারীরিক কিছু পরিবর্তনের একটা বড় অংশ হিসেবেই এক সময়ে তোমার পিরিয়ডও শুরু হবে। কিন্তু পিরিয়ড কী, তুমি কি জানো? নিচে সেটাই জানাচ্ছি বিস্তারিত।
পিরিয়ড ঠিক কী?
পিরিয়ড হওয়ার বয়সে স্বাভাবিকভাবে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে কিছু পরিমাণে রক্ত বের হয়, যা খুবই সাধারণ একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। আর এই বিষয়টির নামই ‘পিরিয়ড’, যা আমাদের দেশে ‘রক্তস্রাব’ বা ‘মাসিক’ নামেও পরিচিত।
কেন এবং কীভাবে হয় এই পিরিয়ড?
গর্ভধারণের উপযোগী বয়সটাতে নারীর শরীর প্রতি মাসে গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত হয়। ডিম্বাশয় থেকে ‘ইস্ট্রোজেন’ (estrogen) আর ‘প্রোজেস্টেরন’ (progesterone) নামের দুই ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়ে থাকে। প্রায় এক মাস সময় নিয়ে এই হরমোনগুলো জরায়ুর ভিতরে একটি আস্তরণ তৈরি করে। এই আস্তরণ কয়েক স্তরে ভাগ হয়ে পুরো রক্তনালীর সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে। সন্তান ধারণের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে নিষিক্ত ডিমের সাথে সংযুক্ত হয়ে বিকাশ শুরু করতে তৈরি থাকে এই আস্তরণ। কিন্তু নিষিক্ত ডিম না থাকলে অর্থাৎ গর্ভাবস্থা না ঘটে থাকলে, সেই মাসে জরায়ু তার আস্তরণ ছিঁড়ে ফেলে। তাই সেখান থেকে কিছুটা রক্ত, কিছু টিস্যুর সাথে মিলে বেরিয়ে আসে যোনিপথ হয়ে।
কোন্ বয়সে পিরিয়ড শুরু হয়ে থাকে?
শারীরিক কিছু অবস্থার ওপর নির্ভর করে ১২ বছর বয়সের কিছু আগে কিংবা পরে প্রথম পিরিয়ড শুরু হয়৷ প্রথমদিকে হয়তো প্রতিমাসে নিয়মিত পিরিয়ড না-ও হতে পারে। তবে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে বেশিরভাগ মেয়ের ক্ষেত্রেই পিরিয়ড নিয়মিত হয়ে যেতে দেখা যায়।
প্রথম পিরিয়ডের সময় কেমন লাগতে পারে
পিরিয়ড শুরুর আগে কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে?
পিরিয়ড শুরুর আগের কিছুটা সময়ে তুমি নিজের মধ্যে এই ব্যাপারগুলো দেখতে পাবে:
— পেটে, পিঠে বা পায়ে ব্যথা
— পেট ফাঁপা অনুভব (পেট ভরা ভাব কিংবা ফুলে গেছে মনে হওয়া)
— স্তনে ব্যথা বা কালশিটে ভাব
— হঠাৎ ব্রণ ওঠা
— সহজেই আর ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন (ছোটখাটো বিষয়ে হঠাৎ করে রেগে যাওয়া কিংবা মন খারাপ লাগা)
— ক্লান্তির অনুভূতি
পিরিয়ডের সময়টাতে তোমার কেমন লাগতে পারে?
কিছু শারীরিক কিংবা মানসিক সমস্যা পিরিয়ডের পুরো সময় জুড়েই হতে পারে। যেমন: পেট ব্যথা, বমিভাব হওয়া, ক্লান্তি বোধ করা ইত্যাদি। কিন্তু কারো ক্ষেত্রে পিরিয়ডের ব্যথা এতটাই বেশি হয়, যে ওই দিনগুলোতে তারা স্কুল কিংবা অফিস কামাই দেয়। বেশি রক্তপাতের ফলেও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। তবে এই লক্ষণগুলোর যে-কোনোটিই অসহনীয় মাত্রায় হলে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়া ভালো হবে।
পিরিয়ডের সময়ে আরাম পাবে কীভাবে?
পিরিয়ড হলে মূল যেই বিষয়গুলো করা দরকার হয়, তার মধ্যে একটি হলো যোনি ঢেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড পরা, যেন রক্ত গায়ে বা পরনের কাপড়ে লেগে লেগে অস্বস্তি ও অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে। অনেকে কাপড় বা তুলা ব্যবহার করেন এবং অন্যদেরকেও করতে বলেন। কিন্তু বারবার একই কাপড় ব্যবহার করাটা তো অবশ্যই ক্ষতিকর, এমনিতেও কাপড় বা তুলা এইক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর সমাধানটি দেয় না।
এবার আসি অন্য যা যা সমস্যা বোধ করতে পারো সেই বিষয়ে। তলপেটে ব্যথা হলে hot water bag কিংবা গরম পানি বোতলে ভরে সেখানে ধরলে কমবেশি আরাম পাওয়া যায়। এছাড়াও, সহজ কিছু শরীরচর্চা বা যোগব্যায়াম করলে শরীর কিছুটা ভালো লাগতে পারে। এই সময়ে বেশি করে পানি, mineral বা খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ খাবার আর ফলমূল খাওয়া উচিত। টাইট কিংবা গরম কাপড় এড়িয়ে চলে এ-সময়ে নরম ও আরামদায়ক পোশাক পরলে চলাফেরা করাটা তোমার জন্য সহজ হবে। পাশাপাশি, একটা স্যানিটারি প্যাড অনেক লম্বা সময় পরে না থেকে একটু খেয়াল করে মাঝেমধ্যে বদলে নেওয়া দরকার।
মাসের কোন্ দিনে পিরিয়ড হবে, কীভাবে বুঝবে?
পিরিয়ডের চক্র বা সাইকেলটি ব্যক্তিভেদে কমবেশি ভিন্ন হয়, সাধারণভাবে এটি ২৬ থেকে ৩২ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। Period cycle বলতে বুঝানো হচ্ছে তোমার একবার পিরিয়ড শুরু হওয়ার দিন থেকে আবার পরবর্তী পিরিয়ড শুরুর আগের দিন পর্যন্ত সময়টি কত দিনের। তুমি খেয়াল রাখলে তোমার নিজের ক্ষেত্রে এই সাইকেলটি নিজেই বুঝে নিতে পারবে। একেকবার পিরিয়ড কতদিন স্থায়ী হচ্ছে, তার সাথে সাথে একবার পিরিয়ড আসার কতদিন পর আরেকবার আসছে সেটিও লক্ষ করো। শুরুর স্বাভাবিক দিনটি মনে রাখতে তুমি এই তারিখটি ক্যালেন্ডারে চিহ্নিত করে কিংবা নোটবুকে লিখে রাখতে পারো। মোবাইল ফোনে বেশকিছু app-এর মাধ্যমেও আজকাল পিরিয়ড শুরু হওয়ার সময় অনুসরণ বা track করা যায়।
সঠিক স্যানিটারি প্যাড বাছাই করবে কীভাবে?
পিরিয়ডের সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তোমার জন্য উপযুক্ত স্যানিটারি প্যাড, যা এদিক-ওদিক কিংবা পাশ দিয়ে রক্তের বেরিয়ে যাওয়া বা লিকেজ (leakage) ছাড়াই পিরিয়ডের রক্ত ধরে রাখতে বা শোষণ (absorb) করে নিতে পারবে। এছাড়াও, নিশ্চিত করতে হবে প্যাডটা যেন আরামদায়ক হয় এবং যোনিতে চুলকানি বা জ্বালা সৃষ্টি করার মতো কোনো প্রকার সংক্রমণ (vaginal infection) না ঘটায়।
স্যানিটারি প্যাড বাছাই করার সময় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা দরকার:
১. ভালো শোষণক্ষমতা
একটা ভালো স্যানিটারি প্যাড অল্প সময়ের মধ্যে ভালো পরিমাণে রক্ত শোষণ করতে পারে। শোষিত রক্ত যখন প্যাডের মধ্যের অংশেই আটকে দিতে পারে, তখন প্যাডে কোনোরকম চাপ পড়ার ঘটনায় (যেমন, বসার সময়) পাশ দিয়ে পিছনে ছড়িয়ে যাওয়ার (back flow) সম্ভাবনাও কমে। রক্ত ঠিকভাবে কেন্দ্রভাগে শোষিত হয়েছে কিনা, তা বুঝবার একটি উপায় হলো প্যাডের উপরের রক্তের রং খেয়াল করা। উজ্জ্বল বা তাজা রক্তের রং দেখলে বুঝতে হবে প্যাডটির শোষণক্ষমতা কম, যা back flow আটকাতে পারবে না। তাই, এর থেকে হতে পারে লিকেজ। কিন্তু রংটি যদি হালকা লাল বা আবছা লাল হয়, তাহলে এর অর্থ হলো রক্ত কার্যকরভাবে শোষিত হয়েছে।
২. প্যাডের দৈর্ঘ্য
পিরিয়ডের শুরুতে সাধারণত রক্তপাত বেশি হয়, তাই সেই রক্তকে দ্রুত ও কার্যকরভাবে শোষণ করতে পারে এমন একটি প্যাড বেছে নেওয়া দরকার হয়।
সময়ের হিসেবে রক্তের প্রবাহ অনুযায়ী স্যানিটারি প্যাডগুলোকে day এবং night ক্যাটেগোরিতে ভাগ করা হয়। ডে প্যাডগুলোর দৈর্ঘ্য ছোট (১৭০ মিঃমিঃ থেকে ২৫০ মিঃমিঃ পর্যন্ত) হয়ে থাকে এবং নাইট প্যাডগুলোর দৈর্ঘ্য হয় ৩৫০ মিঃমিঃ বা তার বেশি। মান ঠিক রেখে প্যাড যত লম্বা হয়, স্বাভাবিকভাবে তত বেশি রক্ত শোষণ করতে পারে। শুয়ে থাকার সময় পিছনের লিকেজ কার্যকরভাবে আটকানোর জন্য ভালো নাইট প্যাডে চওড়া hip guard থাকে।
৩. উপাদানগত আরাম
স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলা, cotton বা net জাতীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। প্রত্যেকের ত্বক আলাদা, তাই এভাবে নির্দিষ্ট উপকরণের সাথে আরামের মাত্রাও আলাদা। কারো হয়তো নরম তুলার প্যাড পছন্দ, আবার কারো নেটের top layer পছন্দ হতে পারে। কিন্তু উপাদানের ধরন বাতাস চলাচলকে প্রভাবিত করে।
যেই দিনগুলোতে রক্তপাত কম থাকে, তখন যোনিতে আর্দ্রতা বা ভেজা ভাবের মাত্রাও কম থাকে। কিন্তু উপাদান হিসেবে কোমল না হলে স্যানিটারি প্যাডের সাথে ত্বকের ক্রমাগত ঘষা লাগায় ত্বক লাল হয়ে যেতে দেখা যায়। একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো— পিরিয়ডের সময়ে যোনি ও আশপাশের অঞ্চলে (pubic area) ফুসকুড়ি বা rash হবেই। কিন্তু নরম ও আরামদায়ক স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে এই সমস্যাটি কমানো যেতে পারে।
বেছে নাও তোমার জন্য সঠিক প্রডাক্ট
পিরিয়ড সামলাতে ‘মোনালিসা’ কীভাবে সাহায্য করে থাকে?
মোনালিসা স্যানিটারি ন্যাপকিন-এ শোষণক্ষমতা বৃদ্ধিকারী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে উন্নত মানের fluff pulp এবং এসএপি (super-absorbent polymer), যা কম সময়ে বেশি তরল শোষণ করতে পারে। এটি প্যাডের ভেতর থেকে রক্ত ভালোভাবে শোষণ করে সর্বোচ্চ শুষ্ক ঝরঝরে অনুভূতি এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে। এর সবচেয়ে উপরের লেয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেরা মানের পিপিএফ (perforated poly film), যা রক্তকে একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত করতে সহায়তা করে। ঘরে তৈরি ন্যাপকিনের বদলে এটি একটি স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী বৈজ্ঞানিক সমাধান, যা স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি তোমার স্বাস্থ্যেরও যত্ন নেয়।
হেভি ফ্লো’র দিনগুলোও কাটাও নিশ্চিন্তে
পিরিয়ডের রাতও কাটুক আরেকটু স্বাচ্ছন্দ্যে
পিরিয়ড, নারীর জীবনে অত্যন্ত স্বাভাবিক কিন্তু অনেক বড় একটা ঘটনা। বয়ঃসন্ধিকালে শুরু হওয়া পিরিয়ড প্রত্যেক মেয়ের শরীরে ও মনে নিয়ে আসে অস্থায়ী এবং স্থায়ী অনেক পরিবর্তন। আপনার পরিবারে এবং কাজের জায়গায় আশেপাশে কেউ হয়তো যে-কোনো সময়েই পিরিয়ড নামের এই শারীরিক প্রক্রিয়াটার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পিরিয়ড-কালীন পথচলা কিছুটা হলেও সহজ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য আপনিও সহযোগিতা করতে পারেন – তা সে হোক সরাসরি কিংবা হোক কমবেশি পরোক্ষভাবে – যদি আপনিও এই বিষয়টাকে জানেন এবং কিছু বিষয় একটু সচেতনভাবে খেয়াল করেন।
পিরিয়ড ঠিক কী?
পিরিয়ড হওয়ার বয়সে স্বাভাবিকভাবে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে কিছু পরিমাণে রক্ত বের হয়, যা খুবই সাধারণ একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। আর এই বিষয়টির নামই ‘পিরিয়ড’, যা আমাদের দেশে ‘রক্তস্রাব’ বা ‘মাসিক’ নামেও পরিচিত।
কেন এবং কীভাবে হয় এই পিরিয়ড? (Hyperlink of article 9)
গর্ভধারণের উপযোগী বয়সটাতে নারীর শরীর প্রতি মাসে গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত হয়। ডিম্বাশয় থেকে ‘ইস্ট্রোজেন’ (estrogen) আর ‘প্রোজেস্টেরন’ (progesterone) নামের দুই ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়ে থাকে। প্রায় এক মাস সময় নিয়ে এই হরমোনগুলো জরায়ুর ভিতরে একটি আস্তরণ তৈরি করে। এই আস্তরণ কয়েক স্তরে ভাগ হয়ে পুরো রক্তনালীর সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে। সন্তান ধারণের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে নিষিক্ত ডিমের সাথে সংযুক্ত হয়ে বিকাশ শুরু করতে তৈরি থাকে এই আস্তরণ। কিন্তু নিষিক্ত ডিম না থাকলে অর্থাৎ গর্ভাবস্থা না ঘটে থাকলে, সেই মাসে জরায়ু তার আস্তরণ ছিঁড়ে ফেলে। তাই সেখান থেকে কিছুটা রক্ত, কিছু টিস্যুর সাথে মিলে বেরিয়ে আসে যোনিপথ হয়ে।
কোন্ বয়সে পিরিয়ড শুরু হয়ে থাকে?
শারীরিক কিছু অবস্থার ওপর নির্ভর করে ১২ বছর বয়সের কিছু আগে কিংবা পরে প্রথম পিরিয়ড শুরু হয়৷ প্রথমদিকে হয়তো প্রতিমাসে নিয়মিত পিরিয়ড না-ও হতে পারে। তবে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে বেশিরভাগ মেয়ের ক্ষেত্রেই পিরিয়ড নিয়মিত হয়ে যেতে দেখা যায়।
প্রিয়জনের প্রথম পিরিয়ডে কী করবেন?
প্রথম পিরিয়ডের কয়েকদিন আগে থেকেই (সাধারণত ৫ দিন থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত আগে) মেয়ে কিছু পরিবর্তনের সম্মুখীন হবে, যার কিছু লক্ষণ কাছাকাছি থাকলে আপনিও খেয়াল করতে পারেন। যেমন— তলপেটে ব্যথা, ঘনঘন মেজাজ পালটে যাওয়া বা মুড সুইং, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যা, পিঠে ব্যথা ইত্যাদি। এগুলোকে premenstrual syndrome বা PMS বলে। তো, একজন সচেতন ও দায়িত্ববান পুরুষ হিসেবে আপনিও জেনে-বুঝে একটু তৈরি থাকলে পিরিয়ডের সময়টায় কাছের মানুষের অস্বস্তি অনেকটাই কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে পারবেন।
প্রথম পিরিয়ডের সময় বেশির ভাগ মেয়েই ভয় পেয়ে থাকে। তাই আগে থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ এবং সুন্দর গল্পের মাধ্যমে তার কাছে এই বিষয়টাকে আরো সহজ করে তুলতে পারেন, যাতে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই পরিবর্তনের ব্যাপারে আগে থেকেই জেনে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা সম্ভব হয়। সম্পর্ক এবং নির্দিষ্টভাবে আপনাদের দু’জনের মধ্যকার বরাবরের আন্তরিকতা ও আস্থার জায়গা থেকে অবশ্যই এটা বুঝেই এই আলাপ শুরু করা উচিত হবে, যেন হঠাৎ এমন বিষয়ে কথা বলাটাই উলটো আরো বাড়তি অস্বস্তি বা নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি না করে।
পিরিয়ডের ফলে মেয়েদের শরীরে ও মনে পরিবর্তন আসে?
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েরা বিভিন্ন পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়। বিশেষত পিরিয়ডের সময়টাতে প্রত্যেক মেয়েরই বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পিরিয়ডের প্রথম দুইদিন সাধারণত বেশি রক্তপাত হয়, সাথে দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথাও থাকে। তখন ঘনঘন মুড সুইং হওয়া, মাথাব্যথা বা বিরক্ত বোধ হওয়া স্বাভাবিক। এরকম সময়ে প্রয়োজনে সেকের জন্য হট ওয়াটার ব্যাগটা এগিয়ে দেওয়া, পছন্দের খাবার রান্না করা বা নিয়ে আসা, সাধ্যের মধ্যে কিছু উপহার দেওয়ার মতো ছোট ছোট কাজও মুহূর্তেই আপনার প্রিয়জনের মন ভালো করে দিতে পারে। পিরিয়ড চলাকালে মেয়েরা সাধারণত মানসিকভাবেও অতি সংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর থাকে, তাই আপনার বন্ধুত্বপূর্ণ সহমর্মিতা তার এই সময়টা তুলনামূলক সহজে কাটিয়ে উঠতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
কীভাবে তার যত্ন নিবেন?
পিরিয়ডের সময় আপনার কাছের মানুষের যা ভালো লাগে সেটা নিশ্চিত করা, তাকে মানসিকভাবে সহযোগিতা দেওয়া, স্বাস্থ্যকর খাবার আর নিয়মকানুনের ব্যাপারে সচেতন করা, তার পিরিয়ড সাইকেলের ব্যাপারে ধারণা রাখা এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া (যেমন— স্যানিটারি প্যাড, ট্যাম্পন বা প্রয়োজনীয় ওষুধ রেডি রাখা ইত্যাদি) এমন ছোট ছোট কাজগুলোর মাধ্যমেই তার পাশে থাকা সম্ভব। প্রত্যেক পুরুষের অনুভব করা এবং ভাবনায় রাখা উচিত, পিরিয়ডের সময় তার কাছের কোনো নারী কেমন শারীরিক ও মানসিক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দিন কাটান। এই সময়ে মানসিকভাবে পাশে থাকা এবং বন্ধুত্ব-মমত্বপূর্ণ আচরণ তিনি তো আশা করতেই পারেন আপনার কাছ থেকে। এই সময়ে ভালোবাসা ও মমতাই পিরিয়ড চলাকালীন বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে তাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে।
তার পিরিয়ড সংক্রান্ত কী কী সমস্যা হতে পারে?
পিরিয়ডের সময়ে আপনার কাছের নারীর বিভিন্ন রকম সমস্যাই হতে পারে। সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিনের সাইকেলের মধ্যেই পিরিয়ডের আসা-যাওয়া চলে। কখনো এই সময় পার হয়ে গেলেও পিরিয়ড না হওয়া, পিরিয়ড চলতে থাকা সময়ে অতিরিক্ত বমি ভাব, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ৭ দিন পার হয়ে গেলেও পিরিয়ড থেকে যাওয়া, টানা কয়েক মাস পিরিয়ড না হওয়া, অতিরিক্ত ব্যথার মতো বিষয়গুলো অস্বাভাবিক এবং পিরিয়ডের ব্যাপারটাকে আরো বেশি কষ্টদায়ক করে তোলে। এমনকি endometriosis, pelvic inflammatory disease-সহ নানান অসুখও হয়ে থাকতে পারে। কাছের একজন দায়িত্বশীল পুরুষের তাই এসব বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান বা ধারণা এবং এমন সমস্যার লক্ষণ জানলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো মাথায় রেখে চলা প্রয়োজন। প্রায়ই দেখা যায় পিরিয়ড চলাকালে ভারী কাজ করা, পরিচ্ছন্ন পরিবেশের অভাব, অথবা শারীরিক শ্রমের কাজ বেশি মাত্রায় করার ফলেও নারীদের শরীরে নানান সমস্যা হয়ে থাকে। তাই পিরিয়ডের সময়ে আপনার কাছের মানুষটাকে কোনো ভারী পরিশ্রমের কাজ থেকে অব্যাহতি দিতে পারলে এবং তার জন্য পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে আপনি তার শরীরের ওপর বাড়তি চাপ পড়ার সম্ভাবনা কমাতেও বেশ সহযোগিতা করতে পারবেন।
পিরিয়ড অস্বাভাবিক হওয়ার কারণ
কর্মক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত?
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কর্মস্থলে মেয়েদের পিরিয়ড চলাকালীন উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা এখনো মোটামুটি অনেক ক্ষেত্রেই অনেকটা অবাস্তব দাবির মতো শুনাতে পারে। অথচ কর্মস্থলে স্যানিটারি প্যাড ও ট্যাম্পন-সহ কিছু দরকারি সরঞ্জামের ব্যবস্থা রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। পিরিয়ড চলতে থাকা সময়ে প্রায়ই প্রবল ব্যথা-সহ শরীরের নানান অস্বাভাবিকতা বয়ে নিয়েও অনেক মেয়েকে কাজ করে যেতে হয়। তাই পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর রেস্ট রুম এবং অতিরিক্ত সমস্যা হলে ছুটির ব্যবস্থা রাখার মতো বিষয়গুলো বাস্তবায়নে পুরুষ সহকর্মীদেরই এগিয়ে আসা উচিত।
কোন্ বিষয়গুলো বদলানো দরকার?
আমাদের সমাজে এখনো পুরুষদের মাঝে মেয়েদের পিরিয়ড সম্পর্কিত নানান ভুল বিশ্বাস ও ধারণা চালু রয়েছে। পরিবারের পুরুষদের সামনে এসব বিষয়ে কথা না বলা, স্কুল-কলেজে পিরিয়ড বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলাকালে ছেলেদেরকে ক্লাস থেকে বাইরে রাখার মতো ব্যাপারগুলো এখনো দেখা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। অথচ এই সময়ে মেয়েদেরকে যে ভিন্ন রকম কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা বাড়ির পুরুষেরাও বুঝলে তবেই সম্ভব মেয়েদের ওপর ওই সময়টাতে না-বুঝে আরো বিভিন্ন রকম বোঝা চাপানোর সুযোগ ও সম্ভাবনা কমানো।
এই সমাজ যেহেতু পুরুষপ্রধান, এসব ক্ষেত্রে পুরুষদেরই বুঝে এগিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। পরিবার এবং কাছের মানুষজনের মাঝে মন খুলে পিরিয়ড কিংবা পিরিয়ড-বিষয়ক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারার মতো পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।
এখনো অনেক জায়গাতেই পিরিয়ডের সময়ে মেয়েদেরকে কাজ করতে দেওয়া হয় না, এমনকি অনেক কিছু স্পর্শ করতেও বারণ দেওয়া হয়— এসব কুসংস্কার-ভিত্তিক আচরণ দ্রুত বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। একেবারেই শরীরের সরাসরি সমস্যাগুলোর বাইরে আশপাশের কারণে উদ্ভূত অন্য ঝামেলা বা অস্বস্তিগুলোর হার ও সম্ভাবনাও এতে করে দিনে দিনে কমে যাবে বলে আশা করা যায়। দিনশেষে নারী এবং পুরুষ মিলে এক, কেউ কম কিংবা বেশি না।
যারা পিরিয়ড হওয়ার মতো বয়সে আছেন এবং বর্তমানে গর্ভবতী না, এমন মেয়ে ও নারীদের সবারই স্বাভাবিকভাবে প্রতি মাসেই কয়েক দিনের জন্য পিরিয়ড হয়ে থাকে। কিন্তু পিরিয়ডে প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা কি একই? সবারই কি সমান রক্তপাত হয়, নাকি সবাই এই সময়টায় একই রকম বিষণ্ন থাকে? জানবো আমরা।
পিরিয়ড ঠিক কী?
পিরিয়ড হওয়ার বয়সে স্বাভাবিকভাবে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে কিছু পরিমাণে রক্ত বের হয়, যা খুবই সাধারণ একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। আর এই বিষয়টির নামই ‘পিরিয়ড’, যা আমাদের দেশে ‘রক্তস্রাব’ বা ‘মাসিক’ নামেও পরিচিত।
কেন এবং কীভাবে হয় এই পিরিয়ড?
গর্ভধারণের উপযোগী বয়সটাতে নারীর শরীর প্রতি মাসে গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত হয়। ডিম্বাশয় থেকে ‘ইস্ট্রোজেন’ (estrogen) আর ‘প্রোজেস্টেরন’ (progesterone) নামের দুই ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়ে থাকে। প্রায় এক মাস সময় নিয়ে এই হরমোনগুলো জরায়ুর ভিতরে একটি আস্তরণ তৈরি করে। এই আস্তরণ কয়েক স্তরে ভাগ হয়ে পুরো রক্তনালীর সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে। সন্তান ধারণের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে নিষিক্ত ডিমের সাথে সংযুক্ত হয়ে বিকাশ শুরু করতে তৈরি থাকে এই আস্তরণ। কিন্তু নিষিক্ত ডিম না থাকলে অর্থাৎ গর্ভাবস্থা না ঘটে থাকলে, সেই মাসে জরায়ু তার আস্তরণ ছিঁড়ে ফেলে। তাই সেখান থেকে কিছুটা রক্ত, কিছু টিস্যুর সাথে মিলে বেরিয়ে আসে যোনিপথ হয়ে।
মাসের কোন্ দিনে পিরিয়ড হবে, কীভাবে বুঝবে?
পিরিয়ডের চক্র বা সাইকেলটি ব্যক্তিভেদে কমবেশি ভিন্ন হয়, সাধারণভাবে এটি ২৬ থেকে ৩২ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। Period cycle বলতে বুঝানো হচ্ছে তোমার একবার পিরিয়ড শুরু হওয়ার দিন থেকে আবার পরবর্তী পিরিয়ড শুরুর আগের দিন পর্যন্ত সময়টি কত দিনের। তুমি খেয়াল রাখলে তোমার নিজের ক্ষেত্রে এই সাইকেলটি নিজেই বুঝে নিতে পারবে। একেকবার পিরিয়ড কতদিন স্থায়ী হচ্ছে, তার সাথে সাথে একবার পিরিয়ড আসার কতদিন পর আরেকবার আসছে সেটিও লক্ষ করো। শুরুর স্বাভাবিক দিনটি মনে রাখতে তুমি এই তারিখটি ক্যালেন্ডারে চিহ্নিত করে কিংবা নোটবুকে লিখে রাখতে পারো। মোবাইল ফোনে বেশকিছু app-এর মাধ্যমেও আজকাল পিরিয়ড শুরু হওয়ার সময় অনুসরণ বা track করা যায়।
সবার পিরিয়ডের অভিজ্ঞতা কি এক?
পিরিয়ড নিয়ে সব মেয়ের অভিজ্ঞতা কখনই এক হয় না। হয়তো তোমার ক্ষেত্রে প্রতি মাসে তা ৪ দিন বা ৫ দিন স্থায়ী হচ্ছে, আরেক জনের হয়তো ৩ দিন। এটি বয়স, ওজন এমনকি দিনযাপনের বা নিয়মিত কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকম হয়। শারীরিক সুস্থতা বা হরমোন লেভেলের প্রভাবেও এই ভিন্নতা হয়। আবার পিরিয়ডের কারণে তলপেটে ব্যথা, মুড সুইং ইত্যাদিও এক এক জনের এক এক রকম মাত্রায় হতে পারে।
পিরিয়ডে রক্তের প্রবাহে ভিন্নতার কারণ কী?
- ওজনের হ্রাস-বৃদ্ধি: পিরিয়ডে রক্তপাতের পরিমাণ বা menstrual flow কম-বেশি হওয়ার পিছনে সম্ভাব্য একটা বড় কারণ হঠাৎ করে ওজন খুব বেড়ে বা কমে যাওয়া। ওজনে হঠাৎ এমন পরিবর্তন হলে শরীরের অন্য অনেক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি তোমার হরমোন রেগুলেশনেও পার্থক্য সৃষ্টি হয়। এর ফলে পিরিয়ডের ফ্লো-ও অন্য সময়ের বা স্বাভাবিকের চেয়ে কম অথবা বেশি হতে পারে।
- বিষণ্নতা: দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত depression-এ বা মানসিক চাপে থাকার ফলেও হরমোন লেভেল ওঠানামা করতে পারে, যা পিরিয়ডের সাইকেল-টাকে নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ফ্লো বেড়ে কিংবা কমে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- রক্তস্বল্পতা: আরেকটা বিশেষ কারণ হলো শরীরে রক্তস্বল্পতা বা anemia. শরীরে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ কমে গেলে এটা হয়। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই মেন্সট্রুয়াল ফ্লো কম অথবা পিরিয়ড দেরিতে হতে দেখা যায়।
পিরিয়ডে ব্যথা কম-বেশি কেন হয়?
পিরিয়ডে সবচেয়ে কষ্টদায়ক বিষয় হলো তলপেটে ব্যথা। তলপেট সহ ঊরু, পা ও পিঠেও ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে অনেক সময়। এতে স্কুল, কলেজ বা অফিস যাওয়াও সম্ভব হয় না।
এই ব্যথা কারো কারো বেশি হওয়ার পিছনের কারণ নিচের যে-কোনো রকমই হতে পারে।
অতিরিক্ত রক্তপাত: নানান কারণে রক্তপাত বেশি হতে পারে। যেমন— দৌড়ঝাঁপ করলে অথবা ভারী ব্যায়াম বা ভারী কাজের ফলে অনেক সময় তলপেটে ব্যথা বাড়ে। এই কারণে মাঝে মাঝে মানসিক অস্থিরতারও সৃষ্টি হতে পারে।
অ্যাডিনোমায়োসিস (adenomyosis): জরায়ুর ভিতরে থাকা myometrium পেশির স্তরে endometrial গ্রন্থির বৃদ্ধির ফলে এই সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে জরায়ুর প্রাচীর পুরু ও আকৃতিতে বড় হয়ে যায়। এটা সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছরের নারীদের মাঝে দেখা যায়।
এন্ডোমেট্রিওসিস (endometriosis): জরায়ুর সবচেয়ে ভিতরের স্তরে endometrium নামের পর্দাটি অস্বাভাবিকভাবে পুরু হয়ে গেলে এই সমস্যা দেখা যায়। সন্তান হয়নি এমন নারীরা এর ঝুঁকিতে একটু বেশি থাকেন।
ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড (uterine fibroids): জরায়ুর ভিতরে টিউমার বা ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড-এর কিছু কারণ থাকে। বেশি অল্প বয়সে পিরিয়ড শুরু হলে, বা শরীর অনেক ভারী হয়ে গেলে, কিংবা পরিবারে আগে কারো জরায়ু টিউমার থেকে থাকলে তোমারও এটা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার বিষয়টা কতটা স্বাভাবিক, এবং কেন হতে পারে?
গর্ভাবস্থায় মেয়েদের পিরিয়ড বন্ধ থাকে। আর, তোমার ওজন হঠাৎ করে খুব বেড়ে বা কমে গেলে তার প্রভাব পিরিয়ড চক্রের উপরেও পড়তে পারে। আবার দীর্ঘদিন মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে, শারীরিক শ্রম বেশি হলে, বা ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন ভারসাম্যে না থাকলে তোমার পিরিয়ড নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশ দেরি করে আসতে পারে। এছাড়াও বেশি ক্যাফিন-যুক্ত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা অথবা অপরিচ্ছন্ন থাকার ফলেও পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি কোনো জটিল রোগ বা ইনফেকশনের ক্ষেত্রেও, যেমন জরায়ু টিউমারে আক্রান্ত হলেও, কয়েক মাস পর্যন্ত পিরিয়ড বন্ধ থাকতে পারে।
পিরিয়ডে অনিয়মের কোন্ কারণগুলো আশঙ্কাজনক?
পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার কিছু কারণ অবশ্য তুলনামূলকভাবে জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন—
- থাইরয়েডের সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন আমাদের দেহের বিপাকে ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। থাইরয়েডে কোনো সমস্যা হলেও পিরিয়ড দেরিতে হতে পারে।
- ক্রনিক রোগ: ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ বলতে আমরা সাধারণত সে রোগগুলোকে বুঝি, যেগুলো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া-জনিত না বরং শরীরের নানান প্রক্রিয়ার কারণেই দীর্ঘদিনের জন্য বাসা বাঁধে। যেমন ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি। তোমার পিরিয়ড চক্রে এগুলোও প্রভাব ফেলতে পারে।
- টিউমার: পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হতে পারে জরায়ুতে টিউমার। এর জন্য তলপেটে ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত কিংবা পিরিয়ড কয়েক মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকার মতো লক্ষণ দেখা যায়।
তাই, পিরিয়ড সাইকেলে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা অনিয়মিত ভাব বুঝতে পারলে তোমার উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যাওয়া এবং তার পরামর্শে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।
পিরিয়ড-কালীন টুকিটাকি সমস্যার ঘরোয়া প্রতিকার
পিরিয়ডের কারণে যে শারীরিক সমস্যাগুলোর মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয়, তার বেশ কিছুই সহজ ঘরোয়া কোনো পদ্ধতিতে মোটামুটি কমিয়ে আনা যায়। যেমন:
- তলপেটের ব্যথা কমাতে হট ওয়াটার ব্যাগের সাহায্যে সেক দেওয়া
- স্বাভাবিক পিরিয়ডে শরীর ও মনকে কিছুটা চাঙ্গা রাখতে যোগব্যায়াম করা
- রক্তপাতের মাত্রা স্বাভাবিকের দিকে রাখতে নিয়মিত সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়া
- রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি ব্যথাও অনেকটা কম রাখার জন্য ক্যাফিন গ্রহণ যতটা পারা যায় কমিয়ে আদা-চা খাওয়া
কখন ডাক্তারের সাথে কথা বলবে?
উপরের ঘরোয়া সমাধানগুলো অনেক সময় তোমার ক্ষেত্রে দ্রুত বা যথেষ্ট ভালো ফল না-ও দিতে পারে। তোমার সমস্যা বাড়তে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। কোনো গুরুতর রোগের লক্ষণ থেকে থাকলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসার মাধ্যমে তার নিরাময় করা উচিত হবে। তাই, বেশি দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যাও, যদি—
- পরপর প্রতি মাসেই তোমার আগের হিসাবের থেকে বেশ আগে বা পরে পিরিয়ড শুরু হয়, বা
- পিরিয়ড খুব বেশি অনিয়মিত হয় (অর্থাৎ কোনো কোনো মাসে এমনকি পিরিয়ড না হয়), বা
- পিরিয়ড ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, বা
- রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়, বা
- পিরিয়ডের রক্তের রং অস্বাভাবিক হয়, বা
- রক্তের সাথে অতিরিক্ত পরিমাণে টিস্যু দেখা যায়, অর্থাৎ রক্তটা বেশি ঘন হয়।
পিরিয়ড একটা শারীরিক প্রক্রিয়া এবং স্বাভাবিভাবে সব মেয়েরই এর সম্মুখীন হতে হয়। তাই, ভয় না পেয়ে সঠিক তথ্য জেনে সঠিক নিয়ম ও উপায় মেনে চলা দরকার। এই বিশেষ দিনগুলোতে নিজের প্রতি মনোযোগী ও যত্নশীল থাকার মাধ্যমে তুমি পিরিয়ড তুলনামূলক ভালোভাবে কাটাতে পারবে। তবে বড় অস্বাভাবিকতার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবে, যেন নিজের অবহেলাই পরবর্তীতে আরো বড় ধরনের শারীরিক দুর্যোগের জন্য দায়ী না হয়।
পিরিয়ডের সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তোমার জন্য উপযুক্ত স্যানিটারি প্যাড, যা এদিক-ওদিক কিংবা পাশ দিয়ে রক্তের বেরিয়ে যাওয়া বা লিকেজ (leakage) ছাড়াই পিরিয়ডের রক্ত ধরে রাখতে বা শোষণ (absorb) করে নিতে পারবে। এছাড়াও, নিশ্চিত করতে হবে প্যাডটা যেন আরামদায়ক হয় এবং যোনিতে চুলকানি বা জ্বালা সৃষ্টি করার মতো কোনো প্রকার সংক্রমণ (vaginal infection) না ঘটায়।
পিরিয়ড ঠিক কী?
পিরিয়ড হওয়ার বয়সে স্বাভাবিকভাবে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে কিছু পরিমাণে রক্ত বের হয়, যা খুবই সাধারণ একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। আর এই বিষয়টির নামই ‘পিরিয়ড’, যা আমাদের দেশে ‘রক্তস্রাব’ বা ‘মাসিক’ নামেও পরিচিত।
কেন এবং কীভাবে হয় এই পিরিয়ড?
গর্ভধারণের উপযোগী বয়সটাতে নারীর শরীর প্রতি মাসে গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত হয়। ডিম্বাশয় থেকে ‘ইস্ট্রোজেন’ (estrogen) আর ‘প্রোজেস্টেরন’ (progesterone) নামের দুই ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়ে থাকে। প্রায় এক মাস সময় নিয়ে এই হরমোনগুলো জরায়ুর ভিতরে একটি আস্তরণ তৈরি করে। এই আস্তরণ কয়েক স্তরে ভাগ হয়ে পুরো রক্তনালীর সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে। সন্তান ধারণের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মিলনের মাধ্যমে নিষিক্ত ডিমের সাথে সংযুক্ত হয়ে বিকাশ শুরু করতে তৈরি থাকে এই আস্তরণ। কিন্তু নিষিক্ত ডিম না থাকলে অর্থাৎ গর্ভাবস্থা না ঘটে থাকলে, সেই মাসে জরায়ু তার আস্তরণ ছিঁড়ে ফেলে। তাই সেখান থেকে কিছুটা রক্ত, কিছু টিস্যুর সাথে মিলে বেরিয়ে আসে যোনিপথ হয়ে।
রক্তপাতের পরিমাণ কেমন হওয়া স্বাভাবিক?
একবারের পিরিয়ডে রক্তপাতের পরিমাণ সাধারণত ৫ মিঃলিঃ থেকে ৮০ মিঃলিঃ পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৮০ মিঃলিঃ থেকে বেশি হলে তাকে ‘Heavy menstrual bleeding’ বলা হয়। সাধারণত পিরিয়ডের প্রথমদিন কিছুটা কম ফ্লো, দ্বিতীয় দিনে কিছুটা বেশি ফ্লো হয়ে থাকে। পিরিয়ড শেষ হওয়ার দিন এগিয়ে আসতে থাকলে ফ্লো-ও কমতে থাক। এটা পুরোপুরি স্বাভাবিক একটা ঘটনা। প্রত্যেক মেয়ের ক্ষেত্রেই এটা ভিন্ন হয়ে থাকে।
পিরিয়ড অস্বাভাবিক হওয়ার কারণ
সবার পিরিয়ডের অভিজ্ঞতা কি সব সময় একই রকম?
পিরিয়ডের সময় তোমার যা-কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যা যা সমস্যা অনুভব করো তুমি, সেগুলোর পিছনে একটা বড় ব্যাপার থাকে শরীরে নানান হরমোনের লেভেলের ওঠানামা। সবার হরমোনের লেভেল একই থাকে না, বাড়া-কমাটাও সবার মধ্যে একইভাবে হয় না। তাই সবার ব্যথার পরিমাণও এক হয় না। দেখবে তোমার হয়তো খুব ব্যথা হচ্ছে, আবার পরিবারের বা বন্ধুদের মধ্যেই অন্য কারো হয়তো তেমন বেশি ব্যথা হয় না। শারীরিক গড়ন, বয়স, ওজন, হরমোনের লেভেল, শরীরের সুস্থতা-অসুস্থতার অন্য নানান দিক, খাদ্যাভ্যাস-সহ জীবনাচরণের ভিন্নতা— এরকম অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে রক্তপাতের মাত্রা এবং ব্যথা-সহ পুরো অভিজ্ঞতার অন্যান্য দিক একেকজনের এবং একেক সময়ে একেক আলাদা রকমের হয়ে থাকে।
বেশি রক্তপাত কখন এবং কেন হতে পারে?
অনেক সময় হরমোন পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে পিরিয়ডের রক্তপ্রবাহের মাত্রা বদলাতে পারে।
তোমার যদি প্রতিদিন সাধারণ আকারের ১টা থেকে ৭টা পর্যন্ত প্যাড লাগে, তবে সেটা স্বাভাবিক বলা যায়। কিন্তু ২ ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে প্যাড পালটাতে হলে বুঝবে যে ব্লিডিংটা বেশ বেশি হচ্ছে।
আর, ৭ দিনের বেশি সময় ধরে পিরিয়ড হলে সেটাকে menorrhagia বলে। এবং এ-সময়ের মাঝে কখনো কখনো রক্তের প্রবাহও বেশ উঁচু মাত্রার হতে পারে। ব্লিডিং বেশি হলে স্বভাবতই কিছুটা অস্বস্তি লাগার পাশাপাশি শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। অনেক রক্ত যাওয়ার ফলে anemia বা রক্তস্বল্পতাও দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নাও, যদি—
১) প্রতি ঘণ্টায় বা দুই ঘণ্টার ব্যবধানে প্যাড বদলানো লাগে, বা
২) রক্ত ধরে রাখতে একটার বেশি প্যাড একসাথে পরতে হয়, বা
৩) ৭ দিনের বেশি সময় ধরে পিরিয়ড চলতে থাকে, বা
৪) পিরিয়ডের সময়েও অন্যবার স্বাভাবিকভাবে করতে পারা কাজগুলোও কোনোবার বেশি রক্তপাতের কারণে করতে সমস্যা অনুভব করো, বা
৫) শ্বাসকষ্ট হয়, বা
৬) বেশি দুর্বল লাগে।
একই আকারের প্যাড কি সবার জন্য প্রযোজ্য?
পিরিয়ড চলাকালে বের হওয়া রক্ত সামলানোর উপায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় আর কাজেও দেয় প্যাড এবং ট্যাম্পন। প্যাড কিংবা স্যানিটারি ন্যাপকিন বিভিন্ন ধরনের ও আকারের হয়ে থাকে। বয়স, যোনির আশপাশের অংশের আকার-আকৃতি এবং রক্তের প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে নিজের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন বেছে নিতে হবে। কিছু প্যাড একটু পাতলা এবং কিছু প্যাড একটু পুরু ও ভারী হয়ে থাকে। রক্ত বেশি গেলে ভারী প্যাড এবং কম গেলে পাতলা প্যাড ব্যবহার করার দরকার হয় খুব স্বাভাবিকভাবেই। আবার ব্যস্ত দিনে পরার জন্য এক রকমের প্যাড, আর রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর জন্য আরেক রকমের প্যাডও পাওয়া যায়।
হ্যাঁ, একই প্যাড তার মানে সবার জন্য আদর্শ হয় না। শুরুতেই একবারেই হয়তো তোমার সম্পূর্ণ উপযুক্ত প্যাডটি খুঁজে পাবে না, তবে বিভিন্ন আকার ও ধরনের প্যাড ব্যবহার করে করে কিছুদিনে নিজের জন্য আদর্শ স্যানিটারি ন্যাপকিনটি বুঝে নিতে হয়।
এমনকি, পিরিয়ডের কত নম্বর দিনে আছো, স্বাভাবিক ক্ষেত্রে সেটার ওপরও রক্তের প্রবাহের মাত্রা অনেকটাই নির্ভর করে। স্যানিটারি ন্যাপকিন তাই এর ওপর ভিত্তি করেও কিছু আলাদা মাপের ও প্রকারের হয়ে থাকে।
১. রেগুলার, ২. লার্জ, এবং ৩. এক্সট্রা লার্জ
প্রতিটি আকারের প্যাড রক্তপ্রবাহের মাত্রার সাথে মিল রেখে বানানো হয়ে থাকে। পিরিয়ডের শেষ দিনে রেগুলার সাইজের স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে পারো। অতিরিক্ত রক্তপাতের দিনগুলোতে এক্সট্রা লার্জ স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা উচিত। এই আকারের স্যানিটারি প্যাড রাতে ব্যবহারের জন্যও আদর্শ, যেহেতু রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ নড়াচড়ায় রক্তপ্রবাহ হঠাৎ বেশি হতে পারে। এছাড়া প্রায়ই পিরিয়ড চলাকালে অনেকেরই অনেকটা সময় ধরে ঘরের বাইরে কাটাতে হয়। তাই ঘনঘন প্যাড পালটানোর সুযোগ থাকে না। এমন পরিস্থিতির জন্যেও এধরনের হেভি-ফ্লো প্যাডগুলো ব্যবহার করা যায়। মান বজায় রেখে এবং একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে স্যানিটারি প্যাড আকারে যত বড় হয়, তার ব্লাড লিকেজ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আর সম্ভাবনাও সাধারণত তত বেশি হয়ে থাকে।
বেছে নাও তোমার জন্য সঠিক প্রডাক্ট
পিরিয়ড সামলাতে ‘মোনালিসা’ কীভাবে সাহায্য করে থাকে?
মোনালিসা স্যানিটারি ন্যাপকিন-এ শোষণক্ষমতা বৃদ্ধিকারী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে উন্নত মানের fluff pulp এবং এসএপি (super-absorbent polymer), যা কম সময়ে বেশি তরল শোষণ করতে পারে। এটি প্যাডের ভেতর থেকে রক্ত ভালোভাবে শোষণ করে সর্বোচ্চ শুষ্ক ঝরঝরে অনুভূতি এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে। এর সবচেয়ে উপরের লেয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেরা মানের পিপিএফ (perforated poly film), যা রক্তকে একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত করতে সহায়তা করে। ঘরে তৈরি ন্যাপকিনের বদলে এটি একটি স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী বৈজ্ঞানিক সমাধান, যা স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি তোমার স্বাস্থ্যেরও যত্ন নেয়। সব মেয়ের শরীরের গঠন, জীবনযাপন এবং পিরিয়ডে রক্তপ্রবাহের মাত্রা একই হয় না। তাই এই সব ভিন্নতার কথা বিবেচনা করে ‘মোনালিসা’ বাজারে এনেছে প্যাডের নানান অপশন। নিজের প্রয়োজন বুঝে এবং মানসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করলে পিরিয়ডের সময়টাকেও তুমি সামলাতে পারবে আরেকটু ভালোভাবে।
পিরিয়ড, মেয়েদের বেড়ে ওঠার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এবং স্বাভাবিক একটা শারীরিক প্রক্রিয়া। তারপরও পিরিয়ড নিয়ে বহু ভুল ধারণা রয়েছে আমাদের সমাজে। আধুনিক যে যুগে আমরা পা রেখেছি, এখনো এসব ভুল ভাবনার শেকল আমাদেরকে ছাড়েনি। দুর্ভাগ্য এটাও, যে এ-বিষয়ে গ্রাম আর শহরের বাস্তবতায়ও পার্থক্য দেখা যায় না খুব একটা। পিরিয়ডের ব্যাপারে তোমাকে হয়তো আগে জানানোই হয়নি, যার ফলে প্রথম প্রথম তোমার ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। আর একই কারণে এই বিষয়ে মা-বোন, বাবা বা বাসার যে-কাউকে জিজ্ঞেস করতেও তোমার সংকোচ বা ইতস্তত বোধ হতেই পারে। তাই, পিরিয়ড নিয়ে খোলাখুলি আলোচনার সংস্কৃতি আর ঠিক জানাশোনার অভাবে এই বিষয়ে আমাদের পরিবারে ও সমাজে নানান কুসংস্কার থেকেই যাচ্ছে।
কী সেই ভুল ধারণাগুলো?
- খাবার সম্পর্কিত
পিরিয়ড চলাকালীন তোমাকে কখনো শুনতে হয়েছে “এটা খাওয়া যাবে না!” বা “রান্নাঘরে যাবে না!”, ইত্যাদি? তাহলে এই বিষয়ে একটা ঘটনা শোনো—
সাবিকুনের বয়স ১৪ বছর। সে গ্রামে থাকে, ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ালেখা করে। দুই বছর আগে তার প্রথম পিরিয়ড হয়েছিল। এই সময়টায় কী কী করা যাবে না, সেই বিষয়ে তার মা আর দাদী তাকে বেশ বড় একটা তালিকা দেন। যেমন: টক খাবার, দই, দুধ, মাছ-মাংস খাওয়া যাবে না; তাহলে নাকি রক্তপাত বেশি হবে! এমনকি, রান্নাঘরে যাওয়া কিংবা কারো খাবারে হাত দেওয়া যাবে না, এতে খাবার অশুদ্ধ হয়ে যাবে!
এই সবই তাদের ভুল ধারণা ছিল। এর ফল যা দাঁড়ালো, সাবিকুন একদিন স্কুলে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে পরে পরীক্ষায় ধরা পড়ে অপুষ্টি আর রক্তশূন্যতা। ডাক্তার তাকে প্রয়োজনীয় ঔষধ আর ভিটামিনের সাথে সাথে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ারও পরামর্শ দেন।
এভাবেই অনেক অভিভাবক এমন অযৌক্তিক কুসংস্কার আজও বিশ্বাস আর প্রচার করে আসছেন।
- কাজকর্ম সম্পর্কিত
- প্যাড কেনা নিয়ে লুকোচুরি
কখনো নিজে দোকানে প্যাড কিনতে গিয়েছো? সত্যি বলতে, স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার কথা ভাবলে দ্বিধায় পড়ে যাও, তাই না? মানুষ কীভাবে তাকাবে, দোকানদার কী বলবে বা ভাববে এসব চিন্তা করে আমরা অনেকেই নিজে প্যাড কিনতে যাই না। মায়েরা, কিংবা পরিবারের অন্য কেউ হয়তো স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে আনেন। দোকানদার সেটাকে অন্য পণ্য থেকে আলাদা করে প্যাকেটে মুড়িয়ে দেয়। কিন্তু স্যানিটারি ন্যাপকিনও তো আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহারের জন্য সাবান বা টয়লেট পেপারের মতোই আরেকটা পণ্য— লজ্জা আর অপ্রয়োজনীয় সংস্কার থেকে বের হয়ে আমাদের সবারই এই ব্যাপারটাকে এমন স্বাভাবিকভাবেই নেওয়া উচিত।
- কাপড়ে রক্তের দাগ
- প্যাড কেনা নিয়ে লুকোচুরি
প্রথম প্রথম পিরিয়ড হলে অসাবধানতাবশত কাপড়ে দাগ লেগে যেতেই পারে। ব্যাপারটা সম্পর্কে ঠিকঠাক জানা থাকার অভাবে অনেকেই সেদিকে তাকিয়ে থাকতে কিংবা লুকিয়ে হাসাহাসি করতে পারে, যেটার কোনো মানেই হয় না। তোমার সামনে কারো এমন দাগ লেগে থাকলে তুমি তাকে অন্য কারো সামনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ার আগেই স্বাভাবিকভাবে বিষয়টা জানাতে পারো, কারণ এটা যেভাবে লজ্জা ব হাসাহাসির বিষয় না তেমনি এটা নিয়ে লুকোচুরিরও কিছু নেই।
- খেলাধুলা বা ব্যায়ামে বাধা
মা কিংবা বাসার অন্য বয়স্ক নারী সদস্যরা হয়তো পিরিয়ড চলার সময়টাতে খেলাধুলা করতে মানা করে থাকেন। এমনকি হালকা ব্যায়ামের উপরেও নিষেধ চলে আসে, যেখানে নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিরিয়ডের সময় হালকা ব্যায়াম রক্ত প্রবাহের মাত্রা ঠিক রাখতে এবং তলপেটের ব্যথা কমাতে ভালো ভূমিকা রাখে, এছাড়াও এই সময়ে হরমোন-জনিত কারণে যে অতিরিক্ত মুড সুইংয়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে সেটাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- পানিতে নামার বিষয়ে নিষেধ
পিরিয়ডের সময়ে নদী বা পুকুরে নামলে সেই পানি অশুদ্ধ হয়ে যাবে এমন একটা ভুল বিশ্বাসও অনেকের মধ্যে আছে, যার কোনো বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা বা যুক্তি নাই। এরকম দুশ্চিন্তারও তাই কোনো কারণ নাই।
- কারো সাথে পিরিয়ড নিয়ে কথা বলতে বারণ
প্রায় সব বয়সের অনেক অনেক নারীর মধ্যেই পিরিয়ড নিয়ে এই দ্বিধা কাজ করে। যেন এটা এমন কোনো বিষয়, যা নিয়ে বাইরে আলোচনা করা তো দূরের কথা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাসায় পরিবারের কাউকেও কিছু জিজ্ঞেস করা যাবে না! কিন্তু সব নারীরই হয় এমন একটা স্বাভাবিক শারীরিক ঘটনা নিয়ে অস্বাভাবিক নীরবতার দায় নেওয়ার কিছু নাই। পিরিয়ড নিয়ে সবার ঠিকঠাক জানা ও ধারণা থাকলে তাই এই বিষয়েও মেয়েদের পথচলাটা সহজ ও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে।
পিরিয়ডের সময় কী মেনে চলবে আর কী এড়িয়ে চলবে?
নানান কুসংস্কার এবং ভুল ধারণা থাকা সত্ত্বেও পিরিয়ডে কিছু বিষয় আর কাজ সত্যিই দরকারি, আবার এমন কিছু কাজও আছে যেগুলো এড়িয়ে চলাই উচিত। নিজের নিরাপত্তা আর স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে এবার তাই সেগুলোও একসাথে দেখে নাও।
মেনে চলা উচিত | এড়িয়ে চললে ভালো |
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা | একই প্যাড বেশিক্ষণ ব্যবহার করা |
শাকসবজি ও ফলমূল বেশি করে খাওয়া | বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার (junk food) খাওয়া |
হালকা ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি করা | ভারী কাজ করা |
দুধ ও ডিম-সহ সুষম খাবার গ্রহণ করা | ভাজাপোড়া ও তেল-মশলা জাতীয় খাবার খাওয়া |
বেশি বেশি পানি পান করা | ক্যাফিন-জাত খাবার বা পানীয়, যেমন কফি |
পর্যাপ্ত ঘুমানো | বেশি রাত জেগে থাকা |
জরুরি প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া | ব্যথা বা ফ্লো স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে তা নিয়ে অসচেতন থাকা |
সঠিক তথ্য জানা | অযথা ভয় ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগা |
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবে যেভাবে
পিরিয়ড নিয়ে নানান মিথ বা ভুল ধ্যানধারণার কারণে অনেক সময়েই মেয়েদের নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক জায়গায় মনে করা হয় পিরিয়ড একটা অভিশাপ, আর এজন্য মেয়েদেরকে ওই সময় অশুদ্ধ ও নোংরা বলে মনে করা হয়, এমনকি সমাজের চোখে তাদের কোনো ধর্মীয় স্থানে যাওয়ার অধিকারও থাকে না তখন। আমাদের উচিত নিজের এবং আশপাশের পরিবারগুলো থেকে শুরু করে সমাজের সব স্তর থেকে এসব ভ্রান্ত ধারণার শেকড় তুলে ফেলা, এবং সকলকে বোঝানো যে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিরিয়ড নিয়ে মেয়েদের সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য জানা থাকা এবং এটা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে কথা হওয়া খুবই জরুরি।
পিরিয়ড তোমার শরীরে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা প্রথমবার আসার সময় থেকে তুমি নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে, তাই পড়তে পারো কমবেশি মানসিক অস্থিরতার মধ্যেও। তবে পুরো বিষয়টা ঠিকভাবে বিস্তারিত- জানতে পারলে প্রায় প্রত্যেকটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
পিরিয়ডের চক্র বা সাইকেলটি কতদিনের হয়?
এক পিরিয়ডের শুরু থেকে আবার পরবর্তী পিরিয়ড শুরু হওয়ার মাঝে দিনের দূরত্ব থাকে সাধারণত ২২ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত। অর্থাৎ, পিরিয়ড ছাড়া মাঝের সময়টাও প্রত্যেকের জন্য একই দৈর্ঘ্যের হয় না। গড় হিসাব ধরলে বলা যায় মোটামুটি ২৮ দিন পরপর পিরিয়ড আসে।
তোমার বয়স যদি ১১ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে হয়, তাহলে তোমার এক পিরিয়ড অনেক সময়ই ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। পরে আরো বয়সের সাথে সাথে এই স্থায়িত্ব কমে স্বাভাবিকভাবে ৪ দিনের দিকে নেমে আসতে পারে।
মাসের কোন্ দিনে পিরিয়ড হবে, কীভাবে বুঝবে?
Period cycle বলতে বুঝানো হয় তোমার একবার পিরিয়ড শুরু হওয়ার দিন থেকে আবার পরবর্তী পিরিয়ড শুরুর আগের দিন পর্যন্ত সময়টি কত দিনের। তুমি খেয়াল রাখলে তোমার নিজের ক্ষেত্রে এই সাইকেলটি নিজেই বুঝে নিতে পারবে। একেকবার পিরিয়ড কতদিন স্থায়ী হচ্ছে, তার সাথে সাথে একবার পিরিয়ড আসার কতদিন পর আরেকবার আসছে সেটিও লক্ষ করো। শুরুর স্বাভাবিক দিনটি মনে রাখতে তুমি এই তারিখটি ক্যালেন্ডারে চিহ্নিত করে কিংবা নোটবুকে লিখে রাখতে পারো। মোবাইল ফোনে বেশকিছু app-এর মাধ্যমেও আজকাল পিরিয়ড শুরু হওয়ার সময় অনুসরণ বা track করা যায়।
এছাড়াও অনেক সময় দেখবে তোমার পিরিয়ড অনিয়মিত, কিংবা দেরিতে হচ্ছে।
কাদের এবং কেমন ক্ষেত্রে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে?
গর্ভাবস্থায় মেয়েদের পিরিয়ড বন্ধ থাকে। আর, তোমার ওজন হঠাৎ করে খুব বেড়ে বা কমে গেলে তার প্রভাব পিরিয়ড চক্রের উপরেও পড়তে পারে। আবার দীর্ঘদিন মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে, শারীরিক শ্রম বেশি হলে, বা ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন ভারসাম্যে না থাকলে তোমার পিরিয়ড নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশ দেরি করে আসতে পারে। এছাড়াও বেশি ক্যাফিন-যুক্ত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা অথবা অপরিচ্ছন্ন থাকার ফলেও পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি কোনো জটিল রোগ বা ইনফেকশনের ক্ষেত্রেও, যেমন জরায়ু টিউমারে আক্রান্ত হলেও, কয়েক মাস পর্যন্ত পিরিয়ড বন্ধ থাকতে পারে।
পিরিয়ড অস্বাভাবিক হওয়ার কারণ
পিরিয়ডে অনিয়মের কোন্ কারণগুলো আশঙ্কাজনক?
পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার কিছু কারণ অবশ্য তুলনামূলকভাবে জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন—
- থাইরয়েডের সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন আমাদের দেহের বিপাকে ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। থাইরয়েডে কোনো সমস্যা হলেও পিরিয়ড দেরিতে হতে পারে।
- ক্রনিক রোগ: ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ বলতে আমরা সাধারণত সে রোগগুলোকে বুঝি, যেগুলো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া-জনিত না বরং শরীরের নানান প্রক্রিয়ার কারণেই দীর্ঘদিনের জন্য বাসা বাঁধে। যেমন ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি। তোমার পিরিয়ড চক্রে এগুলোও প্রভাব ফেলতে পারে।
- টিউমার: পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হতে পারে জরায়ুতে টিউমার। এর জন্য তলপেটে ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত কিংবা পিরিয়ড কয়েক মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকার মতো লক্ষণ দেখা যায়।
তাই, পিরিয়ড সাইকেলে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা অনিয়মিত ভাব বুঝতে পারলে তোমার উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যাওয়া এবং তার পরামর্শে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। আর, পুষ্টিকর খাবার ও ব্যায়ামের অভ্যাসসহ স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণ সার্বিকভাবে তোমার শরীর ভালো রাখার পাশাপাশি হরমোন ইত্যাদির ভারসাম্য নিশ্চিত করে পিরিয়ড নিয়মিত রাখতেও অনেকটাই সাহায্য করবে।
মেয়েদের শারীরিক প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে পিরিয়ড অন্যতম। এই পিরিয়ড খুবই সাধারণ ও স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া হলেও কিছু অংশে এবং মাঝে মাঝে কমবেশি কষ্টেরও। এই সময়টায় তলপেট, পা, ঊরু, পিঠ বা মাথার মতো নানান জায়গায় ব্যথা হতে পারে, যা সাধারণত প্রথম দুইদিনে বেশি হয়ে থাকে। অনেক সময় অসহ্য পর্যায়েও চলে যেতে পারে এই ব্যথা।
কিন্তু এই ব্যথার কারণ কী?
- Prostaglandins
প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন মূলত হরমোন জাতীয় এক ধরনের লিপিড, যা জরায়ুর প্রাচীরে থাকে এবং সেখান থেকেই নিঃসৃত হয়। প্রদাহ (inflammation), ব্যথা বা জরায়ুর সংকোচনের মতো শারীরিক কিছু বিষয়ের জন্য দায়ী থাকে এরা। পিরিয়ডের প্রথম দিকে এদের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় ব্যথাও বেশি অনুভূত হয়।
- Estrogen ও progesterone
পিরিয়ডের চক্রটি নিয়ন্ত্রণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হরমোন এগুলো। আমাদের শরীরের অনেক প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল-ঘটিত প্রক্রিয়ায় সরাসরি প্রভাব ফেলে এই দুই ধরনের হরমোন। পিরিয়ড শুরু হলে ইস্ট্রোজেন লেভেল কমে যায় এবং প্রোজেস্টেরন-এর লেভেল উলটো বেড়ে যায়। এজন্যই তখন ব্যথা হয়, অনেক সময় মাথাব্যথা-সহ।
সবার শরীরে হরমোনের লেভেল একই থাকে না, বাড়া-কমাটাও সবার মধ্যে একইভাবে হয় না। তাই সবার ব্যথার পরিমাণও এক হয় না। দেখবে তোমার হয়তো খুব ব্যথা হচ্ছে, আবার পরিবারের বা বন্ধুদের মধ্যেই অন্য কারো হয়তো তেমন বেশি ব্যথা হয় না।
ব্যথা বেশি হওয়ার পিছনের কারণ নিচের যে-কোনো রকমই হতে পারে।
অতিরিক্ত রক্তপাত: নানান কারণে রক্তপাত বেশি হতে পারে। যেমন— দৌড়ঝাঁপ করলে অথবা ভারী ব্যায়াম বা ভারী কাজের ফলে অনেক সময় তলপেটে ব্যথা বাড়ে। এই কারণে মাঝে মাঝে মানসিক অস্থিরতারও সৃষ্টি হতে পারে।
অ্যাডিনোমায়োসিস (adenomyosis): জরায়ুর ভিতরে থাকা myometrium পেশির স্তরে endometrial গ্রন্থির বৃদ্ধির ফলে এই সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে জরায়ুর প্রাচীর পুরু ও আকৃতিতে বড় হয়ে যায়। এটা সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছরের নারীদের মাঝে দেখা যায়।
এন্ডোমেট্রিওসিস (endometriosis): জরায়ুর সবচেয়ে ভিতরের স্তরে endometrium নামের পর্দাটি অস্বাভাবিকভাবে পুরু হয়ে গেলে এই সমস্যা দেখা যায়। সন্তান হয়নি এমন নারীরা এর ঝুঁকিতে একটু বেশি থাকেন।
ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড (uterine fibroids): জরায়ুর ভিতরে টিউমার বা ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড-এর কিছু কারণ থাকে। বেশি অল্প বয়সে পিরিয়ড শুরু হলে, বা শরীর অনেক ভারী হয়ে গেলে, কিংবা পরিবারে আগে কারো জরায়ু টিউমার থেকে থাকলে তোমারও এটা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
পিরিয়ডের ব্যথা অস্বাভাবিক হলে কী করবে
এই ব্যথা মোকাবেলা করবে কীভাবে?
অতিরিক্ত ব্যথা হলে কিছু বিষয়ে তোমার বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার। যেমন—
- যথাযথ খাদ্যাভাস: পিরিয়ডের দিনগুলোতে নিজের যত্নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো সুষম খাবার খাওয়া। প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং টাটকা ফলমূলের পাশাপাশি নিয়মিত মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের মতো প্রোটিন-জাত খাবার খাবে। এই সুষম খাদ্য আমাদের শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করতে, হরমোনের লেভেল ঠিক রাখতে এবং পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। সেই সাথে কফি, ভাজা-পোড়া খাবার এবং অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো।
- নিয়মিত ব্যায়াম: খোলা বাতাসে একটু হাঁটাহাটি বা হালকা এক্সারসাইজ সাধারণত পিরিয়ডের পেইন কমাতে বেশ কাজে আসে। ভারী কাজ বা ব্যায়ামের বদলে এই মৃদু এক্সারসাইজ অথবা যোগব্যায়াম করলে এটি তোমার হরমোন রেগুলেশনকে ঠিক রাখবে।
- জরুরি প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ: ব্যথা যদি খুব বেশি হয়, বা পিরিয়ডের স্থায়িত্ব বেশি হলে, অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজন হলে ওষুধ খাওয়া উচিত। কারণ, অস্বাভাবিক ব্যথা কোনো গুরুতর রোগের লক্ষণও হতে পারে।
পিরিয়ডে অফিস বা ক্লাস বাদ দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?
পিরিয়ডে যদি তোমার বেশি কষ্ট হয়, অফিস বা স্কুল-কলেজ কামাই করতে পারো। বিশেষত তুমি যদি কেবল বয়ঃসন্ধিকালে পা দিয়ে থাকো এবং পিরিয়ডের সাথে তোমার অভিজ্ঞতা একেবারে নতুন হয়ে থাকে, তবে এই সময়ে স্কুলে যাওয়াটা তোমার জন্য যথেষ্ট কষ্টদায়ক হতে পারে। অতিরিক্ত ব্লিডিংয়ের সাথে সাথে পেটব্যথা অথবা অন্যান্য সমস্যার কারণে বাড়ি থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বয়সের সাথে সাথে পিরিয়ডে ব্যথার পরিমাণ কিছুটা কমে আসে। সুতরাং তুমি যদি প্রাপ্তবয়স্ক হও এবং কোনো কাজে যোগ দিয়ে থাকো, সেটার জন্য যেতে অতটা সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে ব্যথা বেশি থাকলে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় বিশ্রাম করা গেলে ভালো। কারণ, তোমার নিজের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা তো অন্য সবকিছুর উপরে।
প্যাড থেকে র্যাশের কারণ এবং এক্ষেত্রে করণীয় কী?
পিরিয়ডের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটি হলো স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড ব্যবহার। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় এই প্যাডের কারণেই তোমার র্যাশ বা ফুসকুড়ি হচ্ছে। যত্ন না নিলে পরবর্তীতে তা ইনফেকশনে পরিণত হতে পারে। এগুলো কেন হয়, জানো?
সাধারণত একটি প্যাড দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করলে এবং প্যাড তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান নিম্নমানের হয়ে থাকলে ত্বকে এই ধরনের র্যাশ বের হতে দেখা যায়। আবার অনেক প্যাডে সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়, যাতে অনেকের অ্যালার্জি থাকে, তেমন হলেও র্যাশের সমস্যা হতে পারে। তাই, র্যাশ থেকে মুক্ত থাকতে কয়েকটা বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারো—
- সুগন্ধিতে অ্যালার্জি থাকলে সুগন্ধযুক্ত প্যাড এড়িয়ে চলা
- সুতি কাপড়ের আন্ডারওয়্যার ব্যবহার করা
- হালকা গরম পানিতে গোসল করা
- বেশিক্ষণ ধরে একই প্যাড ব্যবহার না করা
পিরিয়ডের সময় যোনি ও আশপাশের যত্ন নিবে কীভাবে?
শরীরের এই অংশগুলো পিরিয়ড চলার সময়টাতে অতিরিক্ত sensitive বা সংবেদনশীল থাকে। তাই সঠিক যত্ন না নিলে নানারকম অসুখ হতে পারে, এমনকি সেগুলোর কোনোটা ক্যান্সারে পর্যন্ত রূপ নিতে পারে। এজন্য তোমার যা যা মেনে চলা প্রয়োজন—
- ভালো প্যাড ব্যবহার করা
- সময়মতো প্যাড পরিবর্তন করা
- সাবান ছাড়া হালকা গরম পানি দিয়ে যোনিপথ পরিষ্কার করা (কারণ, আমাদের নিয়মিত ব্যবহারের সাবানগুলো অনেক সময় ইনফেকশন এবং বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদেরকে মুক্ত রাখা উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকেও মেরে ফেলে।)
- যোনি এবং আশপাশের অঞ্চলকে ভেজা ভাব থেকে যতটা পারা যায় মুক্ত রাখা
কতক্ষণ পরপর প্যাড বদলানো প্রয়োজন?
বারবার বলা হয় একটা প্যাড বেশিক্ষণ ধরে পরে থাকা যাবে না। তাহলে তোমার প্রশ্ন আসতে পারে, ব্যবহৃত প্যাড কতক্ষণ পর পালটাবে!
এটা সাধারণত নির্ভর করে তোমার menstrual flow অর্থাৎ রক্তের প্রবাহের মাত্রার উপরে। মাত্রা বেশি থাকলে তাড়াতাড়িই পালটানোর দরকার হতে পারে। তবে এমনিতে চার ঘণ্টা পরপর পুরোনো প্যাড ফেলে নতুন প্যাড নেওয়া উচিত। তাই লম্বা সময় বাইরে থাকতে হবে জানলে অবশ্যই ব্যাগে আরো কিছু প্যাড রাখা ভালো।
প্যাড কীভাবে ফেলতে হবে?
প্যাড বা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার শেষে সেটি কী করবে, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে তোমার মনে। নিজের স্বাস্থ্যসচেতনতার পাশাপাশি অন্যদের আর পরিবেশের প্রতিও তো কিছু দায়িত্ব আছে আমাদের। তাই একটা প্যাড কোথায় ফেলা হচ্ছে সে-বিষয়েও যত্নশীল হওয়া দরকার। বাসা হোক, অথবা স্কুল-কলেজ কি অফিস— বাথরুমে কিংবা খোলা জায়গায় প্যাড ফেলা ঠিক না। বাথরুমে ফেললে সেটি পাইপলাইনে আটকে যেতে পারে, আর বাইরে কোথাও ফেলে রাখলে সেটাও পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। ব্যবহারের পর প্যাড এজন্য ভালোভাবে টিস্যু বা কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলা উচিত।
ব্যস্ত দিনে heavy flow সামলাবে কীভাবে?
পিরিয়ডের প্রথম দুই-তিন দিনে সাধারণত menstrual flow বেশি হতে পারে। এই অবস্থায় তোমার সারাদিনের খুব ব্যস্ত রুটিন থাকলে প্যাড নিয়ে নানান দুশ্চিন্তা কাজ করতে পারে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লিকেজ হচ্ছে কিনা। বাইরে তোমার অনেক কাজ থাকলে বা তুমি সফরে থাকলে সেক্ষেত্রে বিশেষ প্যাড ব্যবহার করা উচিত, যেগুলো আকারে একটু বড় হয়ে থাকে এবং সেজন্যও আরো কিছু বেশি রক্ত শোষণ করে লিকেজ এড়াতে ভালো কাজ করে। এছাড়া, তোমার ব্যাগে বরাবরই বাড়তি কয়েকটা প্যাড রেখে দেওয়া ভালো, যেন প্রয়োজনে বদলে নিতে পারো।
বেছে নাও তোমার জন্য সঠিক স্যানিটারি ন্যাপকিনটি
প্যাডের পাশাপাশি আর কী সঙ্গে রাখা প্রয়োজন?
প্যাড ছাড়াও আরেকটা যেই বিষয় তোমার খেয়াল রাখা খুব জরুরি, তা হলো নিচের অন্তর্বাস (underwear/panty)। সিনথেটিক ফ্যাব্রিকের আন্ডারওয়্যার ব্যবহার না করে পাতলা ও সুতি কাপড়ের আন্ডারওয়্যার পরলে ভালো। এতে গরম কম লাগবে এবং ঘাম কম হবে, ফলে র্যাশ হওয়ার ঝুঁকিও কমে যাবে। আর, একই আন্ডারওয়্যারও দীর্ঘক্ষণ পরে থাকা ঠিক না। যেহেতু এটি ত্বকের সংস্পর্শে থাকে, সুতরাং ঘাম বা লিকেজ হয়ে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব আন্ডারওয়্যারটিও পালটে ফেলা দরকার হয়। এজন্য ব্যাগে বাড়তি প্যাডের পাশাপাশি বাড়তি আন্ডারওয়্যারও রাখলে পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে একইসাথে তুমি ত্বকের সমস্যাও এড়াতে পারবে।
পিরিয়ড হলো একেবারেই স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। নিজের স্বস্তি ও আরামকে কিছুটা প্রাধান্য দিলে পিরিয়ডের সময়টা আরেকটু সহজ হবে। মনে রাখবে, সঠিক প্যাড ব্যবহার করলে এবং সঠিক উপায় মেনে চলার মাধ্যমে মাসের এই নির্দিষ্ট দিনগুলোও তুমি ভালোভাবে পার করতে পারবে।
পিরিয়ডকে বলা যায় বয়ঃসন্ধিতে আসা একটা মেয়ের জীবনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের বিশাল এক অধ্যায়। কিছু শারীরিক কিংবা মানসিক সমস্যা পিরিয়ডের পুরো সময় জুড়েই হতে পারে। যেমন: পেটব্যথা, বমি ভাব, ক্লান্তি বোধ করা ইত্যাদি।
কতদিন চলে এই পিরিয়ড?
একটি প্রশ্ন দুশ্চিন্তা হয়ে আমাদের মনে প্রায়ই উঁকি দেয়: “এই মাসে পিরিয়ড কবে শুরু হবে? আর কবেই বা শেষ হবে?”
সবেমাত্র বয়ঃসন্ধিতে পা রাখা মেয়েদের পিরিয়ড সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত চলতে পারে। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে তা ৩ থেকে ৫ দিনে নেমে আসে। তবে এই চক্রের পরিবর্তন বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হতে পারে। আর এই মাসিক চক্র চলতে থাকে প্রায় ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত। ওরকম একটা বয়সের পরে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়াটাকে বলে ‘মেনোপজ’ (menopause)।
Mood swing কী?
পিরিয়ড চলার অর্থ প্রতি মাসের ক’টা দিন এমন অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হওয়া, যেগুলো জীবনে আগে ছিল না এবং মাসের অন্য দিনগুলোতেও সেভাবে থাকে না। সেগুলোর মধ্যেই একটা বিষয় মুড সুইং (mood swing) বা কারণে-অকারণে ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন— খুব স্পষ্ট বা নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই খুব বিরক্তির বোধ হওয়া, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে না পারা, ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে depression বা বিষণ্নতায় ভোগা ইত্যাদি। অনেক সময় না চাইতেও বন্ধু বা পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে খারাপ বা ভুল আচরণ করে ফেলা হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় সকালে মনটা বেশ ফুরফুরে থাকলেও কয়েক ঘণ্টা পরেই হঠাৎ মেজাজ খারাপ লাগছে।
কেন এই মুড সুইং হয়?
সাধারণত হরমোন লেভেলে হঠাৎ পরিবর্তনের কারণেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত মুড সুইং ঘটে থাকে। আমাদের সবার শরীরে থাকা যেই বিভিন্ন প্রকারের জৈব-রাসায়নিক তরল বার্তাবাহক হিসেবে শরীরের সব কর্মকাণ্ডের মধ্যে সমন্বয় ঘটায়, সেগুলোকে হরমোন বলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে ‘dopamine’ ও ‘serotonin’ নামক দুই ধরনের হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে এই লক্ষণগুলো দেখা যায়। এবং রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াও মুড সুইং-এর অন্যতম কারণ হতে পারে।
কীভাবে তোমার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিবে?
সবার প্রথমে মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করো। মন ভালো রাখার চেষ্টা করো, তোমার যেসব কাজ ভালো লাগে সেগুলোতে সময় কাটাও। তেমন কাজের মধ্যে থাকতে পারে গান শোনা, মুভি দেখা, বাসার মানুষজনের সাথে গল্প করা, হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করা, অথবা তোমার পছন্দের অন্য যেই কাজই করার সময় তোমার মন ভালো থাকে। এগুলোর পাশাপাশি তোমার ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। ক্যাফিন-যুক্ত খাবার, বিশেষ করে কফি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে। ক্যাফিনের প্রভাবে তলপেটে আর মাথায় ব্যথাও হতে পারে। তাছাড়া, ক্যাফিনের প্রভাব ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবে যেভাবে
পিরিয়ড এবং food craving
পিরিয়ডের সময় প্রায়ই বিভিন্ন জাঙ্ক ফুডের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যেতে দেখা যায়। বিশেষ করে আইসক্রিম, চকলেট, পিৎজা ও ফুচকা জাতীয় খাবার খাওয়ার ইচ্ছা বেশি হয়। খাবারগুলো খেতে মজার, সন্দেহ নেই। এবং খেলে হয়তো কিছুক্ষণ তোমার মন ভালো থাকবে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি ফল কিন্তু তেমন ভালো ন। পিরিয়ড চলাকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া সবচেয়ে ভালো এবং দরকারি। তাই, নিয়মিত সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, দুধ ও ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলো। এ-ধরনের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস একবার তৈরি হলে তা মন ভালো রাখতেও সাহায্য করে।
পিরিয়ডের সময় ব্যথা বেশি হলে আদা চা খেয়ে দেখতে পারো। অনেক ক্ষেত্রেই এটি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যথা কমিয়ে সুস্থ অনুভব করতে সাহায্য করে, তবে এটি সবার জন্য কার্যকর না-ও হতে পারে। আরেকটা জিনিস আছে, যেটা আমাদের সামনে থাকলেও মাঝে মাঝেই আমরা খেতে ভুলে যাই। কী সেটা? পানি! পিরিয়ডের সময় ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার সম্ভাবনা থাকে, তাই এ-সময়টায় বেশি করে পানি খাও।
কোন্ খাবারগুলো এড়িয়ে চলবে?
মিষ্টি পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। কিন্তু অতিরিক্ত মিষ্টি বা লবণ জাতীয় খাবার আমাদের মুড সুইংয়ের কারণ হতে পারে। তাছাড়া, ঝাল-মশলা বা ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার menstrual flow অর্থাৎ মাসিকের সময় রক্তপাতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় এসব খাবার পেটব্যথারও কারণ হতে পারে। আর কফির বিষয়ে তো আগেও বলা হয়েছে। অতিরিক্ত ক্যাফিন তলপেটে ও মাথায় ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এসব খাবার পিরিয়ডের কয়েকটা দিন এড়িয়ে চলাই ভালো।
পিরিয়ডের সময় কি টক খাবার খাওয়া যাবে না?
‘Myth’ (মিথ) শব্দটি দিয়ে পুরোনো বিশ্বাস বা লোককথা বোঝানো হয়। পিরিয়ডের সময়ের খাদ্যাভ্যাস নিয়েও বেশ কিছু মিথ চালু আছে। সেগুলোর কোনো কোনোটা তোমার কানেও এসে থাকতেই পারে।
মাছ, মাংস, দই, টক খাবার (যেমন তেঁতুল) খাওয়া যাবে না, অথবা রান্নাঘরে ঢোকা বা কারো জন্য রান্না করা যাবে না, এমনকি অন্যের খাবারে হাত দিলে সেই খাবার অপবিত্র হয়ে যাবে— এসব কথার পিছনে কিন্তু কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই মোটেও। তবু বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের অনেক মানুষের মুখেই এসব কথা শোনা যায়, এই যুগেও। যেহেতু কথাগুলোর ভিত্তি নেই, তাই শুনলে মন খারাপ করো না। বরং, যারা বলছে তাদেরকে সম্ভব হলে মাথা ঠান্ডা রেখে বোঝানোর চেষ্টা করো।
দেখে নাও পিরিয়ড নিয়ে যত ভুল ধারণা
ঘরে বসে থাকবে, নাকি বাইরে বের হবে?
পিরিয়ডের সময় প্রায়ই ভাবতে হয়— “আমি কি বাসাতেই থাকবো? নাকি বাইরে যেতে পারবো?”
বের হবার সময় মাথায় ভিড় জমায় আরো অনেক প্রশ্ন— “প্যাড ঠিকঠাক আছে তো?” কিংবা “overflow বা বেশি রক্তপাত হলে কী হবে? জামায় দাগ লাগবে না তো?”
এই দিনগুলোতে বাড়িতে থাকার ইচ্ছা হলেও বা বাড়িতে থাকলে ভালো লাগবে মনে হলেও তা তো আর সব সময় সম্ভব হয় না। জরুরি কাজ থাকলে বের হওয়া যেতেই পারে, কিন্তু সেক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় মেনে চলা দরকার। যেমন সঠিক পিরিয়ড সামগ্রী বা প্যাড ব্যবহার করা, ব্যাগের মধ্যে বাড়তি প্যাড রাখা, বেশি করে পানি খাওয়া, স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া, ব্যথা বেড়ে গেলে কোথাও বসে বিশ্রাম নেওয়া, রোদে বেশি ঘোরাফেরা না করা ইত্যাদি।
এই দিনগুলোতে কি ব্যায়াম করা ভালো?
পিরিয়ডে কিছুটা স্বস্তিতে ভালো থাকার একটা খুব কাজের পদ্ধতি আছে, তা হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। পরিমিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা স্বাভাবিকভাবে সব বয়সের সব মানুষের জন্যই উপকারী। পিরিয়ডের সময়গুলোতে ব্যায়াম করার ইচ্ছা হয়তো একটু কম হবে। তবে হালকা হাঁটাহাঁটি বা কার্ডিও, যোগব্যায়াম এবং যেগুলো খুব কঠিন নয় তেমন ব্যায়াম তোমার জন্য খুবই ভালো হতে পারে। এই দিনগুলোতে আমাদের হয়তো খুব ক্লান্ত লাগে। কিন্তু ব্যায়াম শরীরের সুস্থতা ও মাংসপেশির ব্যথা কমানোর সাথে সাথে মনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে, হরমোনের মাত্রাও ঠিক রাখে। তবে ভারী কাজ, যেমন ভারী কিছু তোলা অথবা দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক পরিশ্রম করার মতো কাজগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। এতে তলপেটে ব্যথা এবং রক্তপাত বেশি হতে পারে।
প্যাডের ব্যাপারে কী জানা দরকার?
পিরিয়ডের সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্যাড বা স্যানিটারি ন্যাপকিন। সাধারণত ৪-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত তুমি একটি প্যাড ব্যবহার করতে পারবে।
পিরিয়ডের সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তোমার জন্য উপযুক্ত স্যানিটারি প্যাড, যা লিকেজ ছাড়াই পিরিয়ডের রক্ত ধরে রাখতে বা শোষণ (absorb) করে নিতে পারবে। এছাড়াও, নিশ্চিত করতে হবে প্যাডটা যেন আরামদায়ক হয় এবং যোনিতে চুলকানি বা জ্বালা সৃষ্টি করার মতো কোনো প্রকার সংক্রমণ (vaginal infection) না ঘটায়।
স্যানিটারি প্যাড বাছাই করার সময় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা দরকার:
১. ভালো শোষণক্ষমতা
একটা ভালো স্যানিটারি প্যাড অল্প সময়ের মধ্যে ভালো পরিমাণে রক্ত শোষণ করতে পারে। শোষিত রক্ত যখন প্যাডের মধ্যের অংশেই আটকে দিতে পারে, তখন প্যাডে কোনোরকম চাপ পড়ার ঘটনায় (যেমন, বসার সময়) পাশ দিয়ে পিছনে ছড়িয়ে যাওয়ার (back flow) সম্ভাবনাও কমে। রক্ত ঠিকভাবে কেন্দ্রভাগে শোষিত হয়েছে কিনা, তা বুঝবার একটি উপায় হলো প্যাডের উপরের রক্তের রং খেয়াল করা। উজ্জ্বল বা তাজা রক্তের রং দেখলে বুঝতে হবে প্যাডটির শোষণক্ষমতা কম, যা back flow আটকাতে পারবে না। তাই, এর থেকে হতে পারে লিকেজ। কিন্তু রংটি যদি হালকা লাল বা আবছা লাল হয়, তাহলে এর অর্থ হলো রক্ত কার্যকরভাবে শোষিত হয়েছে।
২. প্যাডের দৈর্ঘ্য
পিরিয়ডের শুরুতে সাধারণত রক্তপাত বেশি হয়, তাই সেই রক্তকে দ্রুত ও কার্যকরভাবে শোষণ করতে পারে এমন একটি প্যাড বেছে নেওয়া দরকার হয়।
সময়ের হিসেবে রক্তের প্রবাহ অনুযায়ী স্যানিটারি প্যাডগুলোকে day এবং night ক্যাটেগোরিতে ভাগ করা হয়। ডে প্যাডগুলোর দৈর্ঘ্য ছোট (১৭০ মিঃমিঃ থেকে ২৫০ মিঃমিঃ পর্যন্ত) হয়ে থাকে এবং নাইট প্যাডগুলোর দৈর্ঘ্য হয় ৩৫০ মিঃমিঃ বা তার বেশি। মান ঠিক রেখে প্যাড যত লম্বা হয়, স্বাভাবিকভাবে তত বেশি রক্ত শোষণ করতে পারে। শুয়ে থাকার সময় পিছনের লিকেজ কার্যকরভাবে আটকানোর জন্য ভালো নাইট প্যাডে চওড়া hip guard থাকে।
৩. উপাদানগত আরাম
স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলা, cotton বা net জাতীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। প্রত্যেকের ত্বক আলাদা, তাই এভাবে নির্দিষ্ট উপকরণের সাথে আরামের মাত্রাও আলাদা। কারো হয়তো নরম তুলার প্যাড পছন্দ, আবার কারো নেটের top layer পছন্দ হতে পারে। কিন্তু উপাদানের ধরন বাতাস চলাচলকে প্রভাবিত করে।
যেই দিনগুলোতে রক্তপাত কম থাকে, তখন যোনিতে আর্দ্রতা বা ভেজা ভাবের মাত্রাও কম থাকে। কিন্তু উপাদান হিসেবে কোমল না হলে স্যানিটারি প্যাডের সাথে ত্বকের ক্রমাগত ঘষা লাগায় ত্বক লাল হয়ে যেতে দেখা যায়। একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো— পিরিয়ডের সময়ে যোনি ও আশপাশের অঞ্চলে (pubic area) ফুসকুড়ি বা rash হবেই। কিন্তু নরম ও আরামদায়ক স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে এই সমস্যাটি কমানো যেতে পারে।
বেছে নাও তোমার জন্য সঠিক স্যানিটারি ন্যাপকিনটি
ব্যবহার শেষে প্যাডটি কী করবে?
প্যাড ব্যবহার শেষে সেটিকে যেখানে-সেখানে না-ফেলে যত্ন সহকারে কাগজ বা কাপড়ে মুড়িয়ে ডাস্টবিনে বা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দেওয়া ভালো, এর ফলে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকবে। পিরিয়ড হলো একেবারেই স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। নিজের স্বস্তি ও আরামকে কিছুটা প্রাধান্য দিলে পিরিয়ডের সময়টা আরেকটু সহজ হবে। মনে রাখবে, সঠিক প্যাড ব্যবহার করলে এবং সঠিক উপায় মেনে চলার মাধ্যমে মাসের এই নির্দিষ্ট দিনগুলোও তুমি ভালোভাবে পার করতে পারবে।
তুমি এমনিতে দারুণ হাসিখুশি হতে পারো, কিন্তু পিরিয়ড শুরুর আগে তোমার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসাটা অস্বাভাবিক না। তোমার মন খারাপ হতে পারে, তুমি ভয় পেতে পারো, মনের মধ্যে অস্বস্তি চলতে পারে, আবার তোমার মানসিক অবস্থা একদম অন্য সময়ের মতো থাকাটাও একেবারে অসম্ভব না।
মন-মেজাজের পরিবর্তনের বিষয়টার সাধারণ কারণ, শরীরে কিছু হরমোন লেভেলের ওঠানামা। পিরিয়ড এগিয়ে আসলে বেশিরভাগ মেয়ের মধ্যেই মানসিক ও শারীরিক মিলিয়ে যেই উপসর্গ বা লক্ষণগুলো দেখা যায়, সেগুলোকে premenstrual syndrome বা PMS বলা হয়। এগুলো কারও ক্ষেত্রে অতটা বেশি প্রভাবশালী না-ও হতে পারে, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে বা কখনও কখনও বেশ তীব্র আকারও ধারণ করতে পারে। সাধারণত প্রতি ৪ জনে ৩ জন মেয়ের মধ্যে লক্ষণীয় পিএমএস হয়ে থাকে।
পিএমএস-এর সম্ভাব্য তালিকাটা মোটামুটি দীর্ঘ। কিন্তু সবগুলো উপসর্গ তোমার যে হবেই, এমন কোনো কথা নেই।
১। মানসিক লক্ষণ:
- টেনশন বা উদ্বেগ বেড়ে যাওয়া
- অকারণেই মন খারাপ থাকা কিংবা কান্না পাওয়া
- ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন, যেমন বিরক্তি বা রাগ
- ঘন ঘন ক্ষুধার পরিবর্তন এবং খাওয়ার ইচ্ছা
- ঘুমাতে সমস্যা হওয়া
- মনোযোগ কমে যাওয়া
২। শারীরিক লক্ষণ:
- জয়েন্ট বা পেশিতে ব্যথা
- মাথাব্যথা
- ক্লান্তি বোধ করা
- স্তনে ব্যথা ও অস্বস্তি লাগা
- হঠাৎ ব্রণ হওয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
PMS-এর আরো গুরুতর একটা পর্যায় হলো premenstrual dysphoric disorder (PMDD)। এতে মেজাজের পরিবর্তন বা বিষণ্নতা-অবসন্নতার মাত্রা বেশ বেশি হয়। PMS বা PMDD’র কারণে যদি তোমার কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয় কিংবা তোমার স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে বলে মনে হয়, তাহলে একজন ভালো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে নাও।
PMS হবার কারণ কী?
বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ বলে, হরমোনের সাইক্লিক পরিবর্তন-সহ মস্তিষ্কের রসায়নই প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোমের সম্ভাব্য কারণ। হরমোনের ওঠানামার সাথেই PMS-এর সূচনা ও মাত্রা সম্পর্কিত। Menopause (নির্দিষ্ট বয়সের পরে পিরিয়ড পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া)-এর পর এবং গর্ভাবস্থায় সাধারণত এই লক্ষণগুলো থাকে না। মেজাজের দ্রুত ওঠানামা কিংবা ঘন ঘন পরিবর্তনের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে serotonin-এর পরিমাণ। অপর্যাপ্ত সেরোটোনিন পিরিয়ডের আগে বিষণ্ণতা, সেইসাথে ক্লান্তি এবং ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
পিএমএস এবং পিরিয়ডের সময় কীভাবে স্বস্তি পাবে?
- যা যা করতে পারো—
- হালকা শরীরচর্চা করলে তুমি শরীরে ও মনে অনেকটাই ঝরঝরে থাকবে।
- একটি স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্যতালিকা অনুসরণ করতে পারো। দিনে ৩ বার করে পরিমাণে বেশি খাবার খাওয়ার চেয়ে, ঘন ঘন অল্প খাবার প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পরপর খাওয়া ভালো।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো উচিত, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা।
- মাথা ভারী লাগলে যোগব্যায়াম থেকেও উপকার পেতে পারো।
- যে যে খাবার খেতে পারো—
- পানি: প্রচুর পানি পান করতে হবে।
- ফল: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য তরমুজ ও শসা’র মতো মিনারেল-সমৃদ্ধ ফল খুবই ভালো।
- সবুজ শাকসবজি: পিরিয়ডের সময় শরীরে আয়রনের মাত্রা কমে যাওয়া সাধারণ ব্যাপার, বিশেষ করে তোমার রক্তের প্রবাহ যদি ভারী বা বেশি হয়। এর ফলে ক্লান্তি, শারীরিক ব্যথা এবং মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে। পালং শাকের মতো সবুজ শাকসবজি শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়ামও রয়েছে। এছাড়াও আদা, চিকেন, মাছ, হলুদ, ডার্ক চকলেট, বাদাম, দই, মসুর ডাল এবং বিচিযুক্ত শাকসবজি খেলে শরীর ভালো লাগবে।
পিরিয়ড চলাকালে যেহেতু পেলভিস-এ ব্যথা ও চাপের অনুভূতি, ভারী মাত্রার রক্তপাত, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া, পেট ফোলা ভাব, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো নানান সমস্যা দেখা দেয়; এগুলো এড়ানোর জন্য সতর্কতার অংশ হিসেবে প্রচুর পানি এবং তরল খাবার খাও। পিরিয়ডের সময় প্রায়ই বিভিন্ন জাঙ্ক ফুডের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যেতে দেখা যায়। বিশেষ করে আইসক্রিম, চকলেট, পিৎজা ও ফুচকা জাতীয় খাবার খাওয়ার ইচ্ছা বেশি হয়। খাবারগুলো খেতে মজার, সন্দেহ নেই। এবং খেলে হয়তো কিছুক্ষণ তোমার মন ভালো থাকবে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি ফল কিন্তু তেমন ভালো ন। পিরিয়ড চলাকালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া সবচেয়ে ভালো এবং দরকারি। তাই, নিয়মিত সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, দুধ ও ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলো। এ-ধরনের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস একবার তৈরি হলে তা মন ভালো রাখতেও সাহায্য করে।
পিরিয়ডের সময় ব্যথা বেশি হলে আদা চা খেয়ে দেখতে পারো। অনেক ক্ষেত্রেই এটি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যথা কমিয়ে সুস্থ অনুভব করতে সাহায্য করে, তবে এটি সবার জন্য কার্যকর না-ও হতে পারে। আরেকটা জিনিস আছে, যেটা আমাদের সামনে থাকলেও মাঝে মাঝেই আমরা খেতে ভুলে যাই। কী সেটা? পানি! পিরিয়ডের সময় ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার সম্ভাবনা থাকে, তাই এ-সময়টায় বেশি করে পানি খাও।
- যে যে কাজ না করলে ভালো—
কঠিন কোনো শারীরিক পরিশ্রম কিংবা ব্যায়াম পিরিয়ড চলার সময়টাতে না করাই ভালো। ভারী কিংবা কঠিন কোনো শারীরিক চর্চা করাটা এ-সময়ে যথেষ্ট কষ্টকর এবং বিপজ্জনক হতে পারে। পেলভিস-এ অতিরিক্ত চাপ পড়ায় এতে করে রক্তপাত অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে, তলপেট থেকে শুরু করে কোমরে ব্যথার পরিমাণও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাথা ঘোরা এবং অতিরিক্ত দুর্বলতাও দেখা দিতে পারে।
পিরিয়ড শুরুর পরে কী চাই?
পিরিয়ড শুরু হওয়ার পরে কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকতে তোমার দরকার একটা ঠিকঠাক স্যানিটারি ন্যাপকিন।
পিরিয়ড চলতে থাকা সময়ে জামাকাপড়ে রক্তের দাগ লেগে যাওয়ার মতো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে অনেক মেয়েরই পড়তে হয় কম বা বেশি। ব্যাপারটা যতোই বিরক্তিকর হোক না কেন, এটা নিয়ন্ত্রণ করা কিন্তু যথেষ্ট কঠিন। সাধারণত, এই রক্তের দাগ পড়ে কিছু নির্দিষ্ট কারণে। যেমন, লিকেজ, প্যাডের শোষণ এবং ধারণক্ষমতা কম থাকা, অতিরিক্ত ভারী রক্তপ্রবাহ, ঘুমের মাঝে হঠাৎ পাশ বদল ইত্যাদি, যেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন।
কিন্তু পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহ চলাকালীন দিনগুলোতে ব্যবহার করার জন্য স্যানিটারি প্যাড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তোমার প্রথম এবং প্রধান গুরুত্ব দিতে হবে প্যাডের শোষণক্ষমতার ওপরে। উচ্চমাত্রার শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্যাড বাছাই করতে হবে। এরপর তোমাকে লক্ষ্য রাখতে হবে প্যাডটা আরামদায়ক কিনা তার ওপরে। সেক্ষেত্রে প্যাডের উপাদানগত মান যাচাই করে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে প্যাডের গুণগত মানের প্রতিও৷
পিরিয়ডের কত নম্বর দিনে আছো, স্বাভাবিক ক্ষেত্রে সেটার ওপরও রক্তের প্রবাহের মাত্রা অনেকটাই নির্ভর করে। স্যানিটারি ন্যাপকিন তাই এর ওপর ভিত্তি করেও কিছু আলাদা মাপের ও প্রকারের হয়ে থাকে।
১. রেগুলার, ২. লার্জ, এবং ৩. এক্সট্রা লার্জ
প্রতিটি আকারের প্যাড রক্তপ্রবাহের মাত্রার সাথে মিল রেখে বানানো হয়ে থাকে। পিরিয়ডের শেষ দিনে রেগুলার সাইজের স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে পারো। অতিরিক্ত রক্তপাতের দিনগুলোতে এক্সট্রা লার্জ স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা উচিত। এই আকারের স্যানিটারি প্যাড রাতে ব্যবহারের জন্যও আদর্শ, যেহেতু রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ নড়াচড়াতে রক্তপ্রবাহ হঠাৎ বেশি হতে পারে। মান বজায় রেখে এবং একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে স্যানিটারি প্যাড আকারে যত বড় হয়, তার ব্লাড লিকেজ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আর সম্ভাবনাও সাধারণত তত বেশি হয়ে থাকে।
শরীরের কিছু অবস্থাভেদে ১২ বছর বয়সের কিছু আগে কিংবা পরে মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হয়, যেটা একটা নিয়মিত শারীরিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে এটাকে ‘রক্তস্রাব’ বা ‘মাসিক’ও বলা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ মেয়ের ক্ষেত্রেই ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে পিরিয়ড নিয়মিত হয়ে যেতে দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক সময়েই সংস্কার এবং নানান জড়তার কারণে মেয়েটিকে আগে থেকে পিরিয়ডের বিষয়ে জানানো হয় না। ফলে হঠাৎ একদিন নিজের যোনিপথ দিয়ে রক্তপাত দেখে ভয় পেয়ে যাওয়াটা তোমার পক্ষে যথেষ্ট স্বাভাবিক। এজন্যেও, প্রকৃতপক্ষে জীবনে প্রথম পিরিয়ড আসার আগেই পিরিয়ড সম্পর্কে ভালোভাবে জানাটা তোমার জন্য দরকারি।
পিরিয়ড নিয়ে নানান প্রশ্ন মনে আসতে পারে। এই সময়টায় স্বাভাবিকভাবে তোমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে তোমার পরিবার। প্রথম পিরিয়ডের যাত্রাটা যেন নিজেকে লুকিয়ে রাখার কষ্টে পার করতে না হয়, সেজন্য পরিবারের খেয়াল ও মনোযোগ বেশ কার্যকর সহযোগিতার ভূমিকা রাখতে পারে। আর, ‘মোনালিসা’ও তাই তোমাকে জানাচ্ছে পিরিয়ড-এর আগাগোড়া সব।
প্রথম পিরিয়ড শুরুর আগে তোমার শরীরে কেমন স্থায়ী পরিবর্তন দেখা দিতে পারে?
দেখ তো, তোমার মধ্যে কি এই পরিবর্তনগুলো আসছে?
- দুই পায়ের মাঝের যুক্ত অংশে চুলের (pubic hair) বিকাশ
- পায়ে ঘন চুল এবং বাহুর নিচে (বগলের এলাকায়) দৃশ্যমান চুল গজানো
- মুখের ত্বকে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্রণ ওঠা
- স্তনের আকার বৃদ্ধি
- শরীরের কিছু অংশের আকারে পরিবর্তন, যেমন নিতম্ব আর উরুর আকার বৃদ্ধি পাওয়া
তোমার বড় হওয়ার সময়কার এই পরিবর্তনগুলোর মানে হচ্ছে যে-কোনো সময়ে আসতে পারে তোমার প্রথম পিরিয়ড।
পিরিয়ডের সময়টায় নিজের যত্ন
প্রত্যেক পিরিয়ড শুরুর আগে কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে?
— পেটে, পিঠে বা পায়ে ব্যথা
— পেট ফাঁপা অনুভব (পেট ভরা ভাব কিংবা ফুলে গেছে মনে হওয়া)
— স্তনে ব্যথা বা কালশিটে ভাব
— হঠাৎ ব্রণ ওঠা
— সহজেই আর ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন (ছোটখাটো বিষয়ে হঠাৎ করে রেগে যাওয়া কিংবা মন খারাপ লাগা)
— ক্লান্তির অনুভূতি
প্রথম পিরিয়ড শেষে তোমার মধ্যে কী পরিবর্তন আসবে?
প্রথম পিরিয়ডের পরপরই প্রত্যেক মাসে নিয়ম মেনে একইভাবে পিরিয়ড না-ও হতে পারে৷ তবে ২-৩ বছরে স্বাভাবিকভাবে প্রতি ৪-৫ সপ্তাহে একবার পিরিয়ডের রুটিন ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা।
পিরিয়ডের অধ্যায় জীবনে শুরু হয়ে গেলে, শারীরিক ও মানসিক দুইদিক থেকেই নানান পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে থাকার পাশাপাশি কারো কারো রক্তপাতের প্রবাহ একটু ভারী হয়। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে খুব অভ্যস্ত না হওয়ায় অথবা ঠিক ন্যাপকিন ব্যবহার না করার কারণে মাঝেমধ্যে রক্ত লিক করাটাও অনেকের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক। অনেকেরই বমি বমি ভাব, ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং তলপেটে-কোমরে-পায়ে অবশ ভাব কিংবা ব্যথা অনুভব হওয়ার মতো সমস্যাগুলোও দেখা দেয় কমবেশি। সেজন্যেই, আগে জানা না থাকলে এই অন্যরকম সময়গুলোর জন্য নিজেকে তৈরি রাখাটা যে-কারো জন্য কঠিন হতেই পারে।
পিরিয়ডের মতো বিষয় নিয়ে কথা বলতে তোমার বাবা-মা’র মাঝে কিছুটা অস্বস্তিবোধ থাকতে পারে। তবে তোমার নিজের-সহ পরিবারের সবারই এটা বোঝা প্রয়োজন যে পিরিয়ডের বিষয়টা লজ্জাজনক বা ভীতিকর কোনো অসুখ না, বরং এই পরিবর্তনগুলোর প্রতি একটু মনোযোগী হয়ে বুঝে নিলে স্বাস্থ্য ও শরীর সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া সহজ হয়ে ওঠে। তাই, একটা নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানোর পর পিরিয়ড সম্পর্কে মা-বাবা-সহ পরিবারের নির্ভরযোগ্য আপন মানুষদের মধ্যে এ-বিষয়ে কথা হওয়া ভালো।
অভিভাবকেরা কীভাবে ব্যাপারটি সামাল দিবেন?
- বাড়ির মেয়েদেরকে এই কথাগুলো জানিয়ে রাখুন, সম্ভব হলে প্রথম পিরিয়ড আসার আগেই।
- আপনার মেয়ের প্রথম পিরিয়ডটি স্বাভাবিকভাবে নিয়ে আনন্দের সাথে উদযাপন করুন।
- মেয়ের পাশে থাকুন, তার কিছু বলার থাকলে শুনুন। জেনে নিন তার কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে, সেই অনুযায়ী তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করুন।
- প্রথম পিরিয়ড শুরু হলে তাকে নিয়ে একজন সুদক্ষ স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে কথা বলে বুঝে নিন, বয়স আর শরীরের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তার পিরিয়ড হওয়া এবং রক্তের প্রবাহের মাত্রা-সহ সব লক্ষণ স্বাভাবিক আছে কি না।
- তার সাথে উষ্ণ ও মমতাপূর্ণ আচরণ করুন, এবং তার জন্য আশ্বাস ও ভরসার জায়গাটা যতটা সম্ভব বজায় রাখুন।
- এ-সময়ে স্বভাবতই অনেক রকম শারীরিক ও মানসিক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে, সুতরাং কখনই আপনার কোনো মন্তব্যে বা আচরণে মেয়ের মনে যেন নিজেকে নিয়ে অকারণ সংশয় কিংবা পিরিয়ডের প্রতি অপ্রয়োজনীয় ভীতির সৃষ্টি না হয় সেটাও খেয়াল রাখুন।
- শারীরিক সুস্থতার ইতিবাচক দিকগুলোকে তার সামনে যতটা সম্ভব গুরুত্বের সাথে তুলে ধরার চেষ্টা করুন।
পিরিয়ডের সময় কেন তলপেটে ব্যথা হয়?
পিরিয়ড চলার সময়ে জরায়ুর আস্তরণ ‘প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন’ (prostaglandin) নামে একটি হরমোন তৈরি করে থাকে, যার কারণে তোমার জরায়ু সংকুচিত হতে থাকে। পিরিয়ডে পেটব্যথা হওয়ার এটিই মূল কারণ। বিশেষ করে প্রথম পিরিয়ডের সময়ে তোমার ব্যথা অতিরিক্ত হলে তার অর্থ হচ্ছে তোমার শরীরে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন বেশি পরিমাণে তৈরি হচ্ছে অথবা তোমার ওপর এই হরমোনটির প্রভাবের সংবেদনশীলতা একটু বেশি।
পিরিয়ডের সময়কার পেটের cramp বা ব্যথাটার একটা নাম হচ্ছে primary dysmenorrhea. বেশিরভাগ মেয়েরই এই ব্যথা কমবেশি হয়ে থাকে। এটি প্রথম পিরিয়ডের সময় শুরু হলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমে যেতে পারে।
আরেকটা ধরনের ব্যথা হচ্ছে secondary dysmenorrhea, যেটা সরাসরি পিরিয়ডের কারণে না হয়ে বরং অন্য শারীরিক সমস্যা থেকে সৃষ্টি হওয়া cramp. এই ব্যথাটা একটু বেশি হয়ে থাকে, এবং ব্যথার ধরনটাও বেশ অন্যরকম। ব্যথার কারণগুলো এক্ষেত্রে নানান রকমের হতে পারে।
- তোমার শরীরের ভিতরের যে কোষগুলো জরায়ুর আস্তরণের (endometrium) কাজ করে সেগুলো মাঝে মাঝে পেটের গহ্বরের অন্যান্য অংশে পাওয়া যায় (যেই অবস্থাটিকে বলে endometriosis) কিংবা জরায়ু-প্রাচীরের পেশির টিস্যুতে বৃদ্ধি পায় (যেই অবস্থাটির নাম adenomyosis)। এরকম হলে পিরিয়ড শুরু হওয়ার ১ বা ২ দিন আগে ব্যথা শুরু হতে পারে এবং পরবর্তীতে সেই ব্যথা পিরিয়ডের পুরো সময়টা জুড়ে চলতে পারে।
- শ্রোণী বা pelvis এলাকায় কোনো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি— যেমন: ডিম্বাশয়ের সিস্ট (cyst), cervical বা জরায়ুর polyp এবং fibroid.
- প্রজনন অঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও ঘটে থাকতে পারে, যার কারণে প্রথম পিরিয়ডের সময় পেটে অন্যান্য সময়ের থেকে বেশি ব্যথা হওয়া সম্ভব।
- জরায়ুর ভিতরে কোনো অস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ (intrauterine device) ব্যবহার করার কারণেও প্রথম কয়েক মাস পিরিয়ডের সময়ে বেশি ব্যথা করতে পারে। যদি এই ধরনের অতিরিক্ত পিরিয়ড ক্র্যাম্প চলতেই থাকে বা সময়ের সাথে সাথে আরো খারাপ দিকে যায়, তবে অবশ্যই ভালো কোনো ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে।
- শারীরিক গঠনে কোনো জন্মগত সমস্যা থেকে থাকতে পারে। জরায়ুর নিচের যেই অংশ যোনিপথ খুলে রক্ত বের হয়ে যেতে সহায়তা করে, সেটা আকারে ছোট হওয়া এর মধ্যে অন্যতম।
- এছাড়াও, কিছু মেডিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহারের পরে পিরিয়ডের ব্যথা দেখা দিতে পারে। যেমন: cautery, cryotherapy, conization, radiation, endometrial biopsy.
সঠিক স্যানিটারি প্যাড বাছাই করবে কীভাবে?
পিরিয়ডের সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তোমার জন্য উপযুক্ত স্যানিটারি প্যাড, যা এদিক-ওদিক কিংবা পাশ দিয়ে রক্তের বেরিয়ে যাওয়া বা লিকেজ (leakage) ছাড়াই পিরিয়ডের রক্ত ধরে রাখতে বা শোষণ (absorb) করে নিতে পারবে। এছাড়াও, নিশ্চিত করতে হবে প্যাডটা যেন আরামদায়ক হয় এবং যোনিতে চুলকানি বা জ্বালা সৃষ্টি করার মতো কোনো প্রকার সংক্রমণ (vaginal infection) না ঘটায়।
স্যানিটারি প্যাড বাছাই করার সময় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা দরকার:
১. ভালো শোষণক্ষমতা
একটা ভালো স্যানিটারি প্যাড অল্প সময়ের মধ্যে ভালো পরিমাণে রক্ত শোষণ করতে পারে। শোষিত রক্ত যখন প্যাডের মধ্যের অংশেই আটকে দিতে পারে, তখন প্যাডে কোনোরকম চাপ পড়ার ঘটনায় (যেমন, বসার সময়) পাশ দিয়ে পিছনে ছড়িয়ে যাওয়ার (back flow) সম্ভাবনাও কমে। রক্ত ঠিকভাবে কেন্দ্রভাগে শোষিত হয়েছে কিনা, তা বুঝবার একটি উপায় হলো প্যাডের উপরের রক্তের রং খেয়াল করা। উজ্জ্বল বা তাজা রক্তের রং দেখলে বুঝতে হবে প্যাডটির শোষণক্ষমতা কম, যা back flow আটকাতে পারবে না। তাই, এর থেকে হতে পারে লিকেজ। কিন্তু রংটি যদি হালকা লাল বা আবছা লাল হয়, তাহলে এর অর্থ হলো রক্ত কার্যকরভাবে শোষিত হয়েছে।
২. প্যাডের দৈর্ঘ্য
পিরিয়ডের শুরুতে সাধারণত রক্তপাত বেশি হয়, তাই সেই রক্তকে দ্রুত ও কার্যকরভাবে শোষণ করতে পারে এমন একটি প্যাড বেছে নেওয়া দরকার হয়।
সময়ের হিসেবে রক্তের প্রবাহ অনুযায়ী স্যানিটারি প্যাডগুলোকে day এবং night ক্যাটেগোরিতে ভাগ করা হয়। ডে প্যাডগুলোর দৈর্ঘ্য ছোট (১৭০ মিঃমিঃ থেকে ২৫০ মিঃমিঃ পর্যন্ত) হয়ে থাকে এবং নাইট প্যাডগুলোর দৈর্ঘ্য হয় ৩৫০ মিঃমিঃ বা তার বেশি। মান ঠিক রেখে প্যাড যত লম্বা হয়, স্বাভাবিকভাবে তত বেশি রক্ত শোষণ করতে পারে। শুয়ে থাকার সময় পিছনের লিকেজ কার্যকরভাবে আটকানোর জন্য ভালো নাইট প্যাডে চওড়া hip guard থাকে।
৩. উপাদানগত আরাম
স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলা, cotton বা net জাতীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। প্রত্যেকের ত্বক আলাদা, তাই এভাবে নির্দিষ্ট উপকরণের সাথে আরামের মাত্রাও আলাদা। কারো হয়তো নরম তুলার প্যাড পছন্দ, আবার কারো নেটের top layer পছন্দ হতে পারে। কিন্তু উপাদানের ধরন বাতাস চলাচলকে প্রভাবিত করে।
যেই দিনগুলোতে রক্তপাত কম থাকে, তখন যোনিতে আর্দ্রতা বা ভেজা ভাবের মাত্রাও কম থাকে। কিন্তু উপাদান হিসেবে কোমল না হলে স্যানিটারি প্যাডের সাথে ত্বকের ক্রমাগত ঘষা লাগায় ত্বক লাল হয়ে যেতে দেখা যায়। একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো— পিরিয়ডের সময়ে যোনি ও আশপাশের অঞ্চলে (pubic area) ফুসকুড়ি বা rash হবেই। কিন্তু নরম ও আরামদায়ক স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে এই সমস্যাটি কমানো যেতে পারে।